সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে মুখ ঢেকে তরুণের অভিনব প্রচারণা
‘একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না’ স্লোগানে মুখ ঢেকে রংপুরের পথে পথে মানুষকে সচেতন করেন রেজাউল ইসলাম নামের এক তরুণ। গতকাল শনিবার নগরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে থেমে কৌতূহলী মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে সচেতনতামূলক নানা প্ল্যাকার্ড ঝুলছে তাঁর বুকে। মানুষকে সচেতন করতে তাঁর কাকতাড়ুয়া সাজের এই অভিনব প্রচারণার বিষয়টি নগরে আলোচিত হয়েছে।
রেজাউলের বয়স যখন দেড় বছর, তখন তাঁর বাবা নজরুল ইসলাম এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। এখন তাঁর বয়স ২৬। পড়ছেন রংপুর সরকারি কলেজে। বাড়ি নগরের কুকরুল এলাকায়। দেশে প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় অকালেই অনেক মানুষ মারা যাচ্ছেন। এ জন্য গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে মানুষকে সচেতনতার আহ্বান জানিয়ে তিনি অভিনব এই প্রচারণা চালান।
শনিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরের কামারপাড়া-ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে গাড়িচালকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ওই তরুণ। মুখ ঢেকে চশমা পরা এক তরুণ। বুকের মধ্যে প্ল্যাকার্ডে নানা স্লোগান লিখে রেখেছেন। প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না’, ‘তাড়াতাড়ি বাড়ি না ফেরার চেয়ে দেরিতে বাড়ি ফেরা ভালো’, ‘সাবধানে গাড়ি চালান, হাজার জীবন বাঁচবে’, ‘সবাই সচেতন হলে সড়ক দুর্ঘটনা কমে যাবে’, ‘সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি’, ‘সাবধানে গাড়ি চালাই, নিজে বাঁচি, অন্যকে বাঁচাই’ ইত্যাদি।
রেজাউলের বাবা নজরুল ইসলাম পানের ব্যবসা করতেন। ১৯৯৬ সালে নাটোর থেকে ট্রাকে করে পান আনতে গিয়ে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট রেজাউল। এখন ডিগ্রিতে পড়া রেজাউল কারও ওপর নির্ভরশীল না হয়ে টিউশনি করে নিজের খরচ জোগান।
সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে প্রচারণার বিষয়ে রেজাউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মা রওশন আরার কাছে গল্প শুনেছি, বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। অনেক কষ্ট করে মা আমাকে লালন-পালন করে বড় করেছেন। দেশে প্রতিদিন বাবার মতো অনেকে দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছেন। এসব খবর ও ছবি দেখলে বাবার কথা মনে পড়ে। এ জন্য মানুষকে সচেতন করতে কাজ শুরু করি। তাই কিছু স্লোগান লিখে মুখ ঢেকে রাজপথে নেমেছি।’