নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমান, সাবেক এসপি, ডিসিসহ ৫২ জনের নামে হত্যা মামলা
দুই বছর আগে নারায়ণগঞ্জে যুবদলকর্মী শাওন আহম্মেদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) গোলাম মোস্তফা রাসেল, সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) মঞ্জুরুল হাফিজ ও সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, সেলিম ওসমান, নজরুল ইসলাম বাবু, গোলাম দস্তগীর গাজীকে (বীর প্রতীক) আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়েছে।
আজ সোমবার সকালে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় নিহত শাওনের ভাই মিলন মিয়া বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় ৫২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার উল্লেখ্যযোগ্য আসামিরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিছুর রহমান, থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কামরুজ্জামান, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের মাহফুজুর রহমান, এএসআই ফেরদৌস দেওয়ান, ইকবাল হোসেন, দেলোয়ার হোসেনসহ ২৯ জন কনস্টেবলসহ ৫২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত আরও ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি নজরুল ইসলাম।
মামলার এজাহারে মিলন উল্লেখ করেন, ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর নগরের ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় এসপি গোলাম মোস্তফা রাসেল, ডিসি মঞ্জুরুল হাফিজ, শামীম ওসমান, সেলিম ওসমান, নজরুল ইসলাম, গোলাম দস্তগীর, লিয়াকত হোসেন, আবু হাসনাত, আনোয়ার হোসেনসহ (১ থেকে ১৫ নম্বর) আসামি অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তা ও দলীয় কর্মীদের যেকোনো মূল্যে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র্যালি পণ্ড করার নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী, আসামিরা আগ্নেয়াস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে নিরীহ বিএনপির নেতা–কর্মীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। এ সময় গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মাহফুজুর রহমান তাঁর হাতে থাকা চায়নিজ রাইফেল দিয়ে শাওনকে লক্ষ্য করে গুলি করেন। গুলি শাওনের বুকে বিদ্ধ হয়ে পিঠ দিয়ে বের হয়ে গেলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। অন্যান্য আসামিরা এলোপাতাড়ি ছররা গুলি, রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে নিরীহ নেতা–কর্মীদের ওপর গুলি বর্ষণ করেন। এতে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেনসহ তিন শতাধিক নেতা-কর্মী গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় ছাত্রদল নেতা ফারুক আহম্মেদের বুক লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে তাঁর বুক ঝাঁঝরা হয়ে যায়।
মামলার বাদী অভিযোগ করেন, তাঁর ভাই নিহত শাওনের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পুলিশের প্রহরায় দাফন করা হয়। সেখানে পরিবার ও দলীয় নেতা–কর্মীদের জানাজায় ও দাফনে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। ওই সময় সরকারি পুলিশ ও দলীয় নেতা–কর্মীরা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকায় বাদীর পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের ওপর প্রশাসন প্রচণ্ড চাপ দেয় দিলে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে পরিবারটি। বাদীসহ পরিবারের সব সদস্যের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করার এবং তাঁকে (বাদী মিলন) গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে প্রেরণ করে। বাদীসহ তাঁর পরিবারের পুরুষ সদস্যদের জিম্মি করে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে বিএনপির অজ্ঞাত পাঁচ হাজার লোকের নামে মিথ্যা মামলা করতে বাধ্য করা হয়। পরে দ্রুত চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রদান করে বাদীকে পুলিশ তুলে নিয়ে কোর্টে হাজির করে চূড়ান্ত রিপোর্ট গৃহীত হলে আপত্তি নেই বলে জবানবন্দী দিতে বাধ্য করে।