বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাবে বিশেষ ট্রেন। সে জন্য ছাড়া হয় আবেদনপত্র। আবেদন করেন ১০ হাজারের বেশি মানুষ। লটারির মাধ্যমে বাছাই করা হয় ২ হাজার ২৫১ জনকে। এই যাত্রীদের নিয়ে আজ বুধবার রাতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জোড়ামসজিদের ওরশ শরীফের উদ্দেশে যাচ্ছে বিশেষ ট্রেন। এর নাম রাখা হয়েছে ওরশ স্পেশাল ট্রেন।
বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের উদ্যোগে চালিত এই ট্রেনের যাত্রীদের সমন্বয় করে আঞ্জুমান-ই-কাদেরীয়া। সংগঠনটির রাজবাড়ী জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯০২ সাল থেকে প্রতিবছর ওরশ উপলক্ষ্যে রাজবাড়ী থেকে এই ট্রেনটি ছাড়ে। দীর্ঘ এই সময়ে কেবল চার বছর ওরশযাত্রা বন্ধ ছিল। প্রথমে বন্ধ হয় ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের কারণে। এরপর ১৯৯২ সালে বাবরী মসজিদ ভাঙার ঘটনায় ট্রেনযাত্রা বন্ধ ছিল। সর্বশেষ করোনাভাইরাসের কারণে ২০২১ ও ২০২২ সালে ওরশের বিশেষ ট্রেন বন্ধ ছিল। এ ছাড়া আর কখনো ওরশ ট্রেন বন্ধ হয়নি।
আঞ্জুমান-ই-কাদেরীয়া সূত্রে আরও জানা গেছে, আজ রাত ১০টায় রাজবাড়ী থেকে ট্রেনটি ছেড়ে যাবে। সীমান্তে আনুষ্ঠানিকতা শেষে শুক্রবার ভোরে ভারতের মেদনীপুর পৌঁছাবে। শনিবার দিবাগত রাতে ওরশ অনুষ্ঠিত হবে। ১৮ ফেব্রুয়ারি ভারত থেকে রাত ১০টায় বাংলাদেশের উদ্দেশে ছেড়ে ১৯ ফেব্রুয়ারি ট্রেনটি রাজবাড়ীতে ফিরে আসবে।
আঞ্জুমান-ই-কাদেরীয়ার সাধারণ সম্পাদক আবদুল আজিজ কাদেরী বলেন, ওরশে যাওয়ার জন্য আবেদনপত্র ছেড়ে শহরে মাইকিং করা হয়, বিভিন্ন খানকায় জানানো হয়। এ সময় রাজবাড়ী, পাবনা, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া, যশোরসহ বিভিন্ন জেলার ভক্তরা আবেদন করেন। এবার সারাদেশে ১০ হাজারের বেশি আবেদনপত্র জমা পড়ে ছিল। লটারির মাধ্যমে তা বাছাই করা হয়। তবে যাত্রীদের বেশির ভাগই রাজবাড়ীর। ট্রেন ছাড়াও সড়ক পথে ওরশ যাত্রীরা যাতায়াত করেন বলে তিনি জানান।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওরশগামী বিশেষ ট্রেনটি সাজানো হয়েছে। আজ দুপুর থেকে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ ট্রেন দেখতে উপস্থিত হন। বিকেলের দিকে ভিড় বাড়ে। এ কারণে শহরে যানবাহনের প্রবেশ সীমিত করে দেওয়া হয়েছে। ওরশ যাত্রীদের বিদায় জানাতে জনপ্রতিনিধি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারের রেলস্টেশনে যাওয়ার কথা রয়েছে।
রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার তন্ময় কুমার দত্ত বলেন, প্রতিবছর ওরশের এই বিশেষ ট্রেনটি রাজবাড়ী রেলস্টেশন থেকে রাত ঠিক ১০টায় ছেড়ে যায়। আগে বাংলাদেশের কোচ ভারতে যেতো। ২০২০ সাল থেকে ভারত থেকে কোচ পাঠানো হয়।
জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশে দ্বিতীয়টি আর নেই। এটি ভারতের সঙ্গে বন্ধু প্রতীম সম্পর্কের একটি উদাহরণ। ওরশ যাত্রীদের ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করে দেন ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনার। বাংলাদেশী যাত্রীদের জন্য ভিসাসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া সহজ করে দেওয়ায় ভারত সরকার ও মেদনীপুর জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান তিনি।