পাত্তা পেল না প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীরা

কিশোরগঞ্জ-৪ ও ৬ আসনে টানা চারবারের মতো জয় পেয়েছেন সাবেক দুই রাষ্ট্রপতির সন্তানেরা। তাঁরা কেবল জয় পাননি, তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বীরা মাঠে নেমে জামানতও রক্ষা করতে পারেননি। কিশোরগঞ্জ-১ আসনে মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের দুই সন্তান নির্বাচন করেন। তাঁরা ছাড়া অপর ছয় প্রার্থী জামানত হারান।

ভৈরব ও কুলিয়ারচর উপজেলা নিয়ে কিশোরগঞ্জ-৬ আসন। এ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের ছেলে ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান। জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে প্রদত্ত ভোট ২ লাখ ১৩ হাজার ৭১৪। জামানত রক্ষা করতে প্রার্থীদের প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগ ভোট পেতে হয়। অর্থাৎ প্রার্থীদের ২৪ হাজার ৭৬৯ ভোট পেতে হতো। বিজয়ী নাজমুল হাসানের প্রাপ্ত ভোট ১ লাখ ৯৮ হাজার ১৫৫।

অপর পাঁচ প্রার্থী জামানত রক্ষা করতে পারেননি। বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. রুবেল হোসেন ৩ হাজার ২০৬, জাতীয় পার্টির নূরুল কাদের সোহেল ৩ হাজার ৫৬, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আব্দুছ ছাত্তার ২ হাজার ৪৬৯, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মোহাম্মদ আয়ূব হুসেন ১ হাজার ১৯৪, এনপিপির তারেক মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম পান ৪৯১ ভোট।

জাতীয় পার্টির নূরুল কাদের বলেন, এ ভোট পাওয়াকে তিনি নিজের দুর্বলতা হিসেবে দেখছেন না। এমন পরিস্থিতির জন্য নির্বাচনী পরিবেশ দায়ী। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। আবার তাঁর প্রতিপক্ষ সাবেক রাষ্ট্রপতির ছেলে। ভোটাররা নিশ্চিত ছিলেন, আবার সরকারে আসছে আওয়ামী লীগ। নাজমুল হাসানের জয় ঠেকানো যাবে না। এমন পরিস্থিতিতে সবাই নৌকায় নাম লেখাতে চেয়েছেন। ফলে লোকজনের স্বাভাবিকভাবে মত দেওয়ার সুযোগ ছিল না।

কিশোরগঞ্জ-৪ থেকে জয় পান সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বড় ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ। আসনটি জেলার হাওর অধ্যুষিত অষ্টগ্রাম, মিঠামইন ও ইটনা উপজেলা নিয়ে। এখানেও প্রার্থী ছিলেন ছয়জন। নৌকার রেজওয়ান আহম্মদ ২ লাখ ৮ হাজার ৭৩৮ ভোট পেয়ে ফের জয়ী হন। এই আসনে ভোট পড়ে ২ লাখ ১৯ হাজার ২৫০। জামানত রক্ষা করতে প্রার্থীদের প্রয়োজন ছিল ২৭ হাজার ৪০৬ ভোট।

এ আসনে জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ আবু ওয়াহাব পান ২ হাজার ৭৩৫, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. নছিম খাঁন ২ হাজার ২৮১, এনপিপির মো. জয়নাল আবদিন ১ হাজার ২৫৩, বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির আব্দুল মজিদ ৯৯৯ এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মো. শরীফুল আহসান পান ৮২২ ভোট।

কিশোরগঞ্জ-১ আসনে মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের দুই সন্তান নির্বাচন করেন। আসনটি সদর ও হোসেনপুর উপজেলা নিয়ে। নৌকা প্রতীক পান বর্তমান সংসদ সদস্য সৈয়দা জাকিয়া নূর। ঈগল প্রতীকে বোনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান নজরুল ইসলামের আরেক সন্তান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক সামরিক সচিব মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ছোট বোনের কাছে বড় ভাই হেরে যান ৩ হাজার ১৮৬ ভোটে।

এই আসনে মোট প্রার্থী ছিলেন আটজন। সৈয়দ সাফায়েতুল ছাড়া অপর ছয় প্রার্থী জাতীয় পার্টির মো. আবদুল হাই, গণতন্ত্রী পার্টির ভূপেন্দ্র চন্দ্র ভৌমিক দোলন, ইসলামী ঐক্যজোটের মো. আশরাফ উদ্দিন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মোবারক হোসেন, এনপিপির মো. আনোয়ারুল কিবরিয়া ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মো. আব্দুল আউয়াল জামানত হারান।

ফলাফলে জামানত হারানোকে আলাদা করে মূল্যায়ন করার কিছু দেখছেন না ইসলামী ঐক্যজোটের আশরাফ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘পরাজয় তো পরাজয়ই। যে অনেক ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন, তিনিও পরাজিত, আমিও পরাজিত। এর মধ্যে বিশেষ পার্থক্য দেখছি না।’