বঙ্গোপসাগরে ট্রলারডুবে নিখোঁজ জেলেদের সন্ধান পাঁচ দিন পরও মেলেনি
বঙ্গোপসাগরে ঢেউয়ের আঘাতে ট্রলার উল্টে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার পাঁচ জেলে নিখোঁজ হন। এ ঘটনার পাঁচ দিন পরও তাঁদের সন্ধান মেলেনি। আজ শুক্রবার ভোর থেকে নিখোঁজ জেলেদের স্বজনেরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে ট্রলার নিয়ে বঙ্গোপসাগরে উদ্ধারকাজ শুরু করেছেন। তবে বেলা একটা পর্যন্ত নিখোঁজ জেলেদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
গত রোববার রাত সোয়া ১১টার দিকে বঙ্গোপসাগরের নারকেলবাড়িয়া এলাকায় হঠাৎ ঢেউয়ের আঘাতে ‘এফবি ভাই ভাই’ নামের একটি ট্রলার ডুবে যায়। এতে ট্রলারে থাকা ১২ জন জেলে ও মাঝির মধ্যে ৭ জনকে অপর একটি ট্রলারের লোকজন উদ্ধার করলেও নিখোঁজ রয়েছেন পাঁচ জেলে।
নিখোঁজ জেলে বাহাদুর আকনের বড় ভাই সোহেল আকন বলেন, প্রশাসনের পক্ষে থেকে নিখোঁজদের উদ্ধারে কোনো তৎপরতা নেই। এফবি ভাই ভাই ট্রলারের মালিক নজরুল ইসলাম মাঝির নেতৃত্বে একটি ট্রলার নিয়ে নিখোঁজ ব্যক্তিদের কয়েকজন স্বজন বঙ্গোপসাগরে গেছেন। আজ ভোর থেকে বঙ্গোপসাগরের সম্ভাব্য স্থানে তাঁদের সন্ধানে অভিযান চালাচ্ছেন। তাঁদের পরিবারের পক্ষ থেকে ফুফাতো ভাই আল আমিন পেশকারও তাঁদের সঙ্গে গিয়েছেন।
নিখোঁজ জেলে আল আমিন শাহর স্ত্রী সালমা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী নিখোঁজ। তিনি মারা গেলেও অন্তত তাঁর লাশটা যেন আমরা পাই।’
এফবি ভাই ভাই ট্রলারের মালিক নজরুল ইসলাম মাঝি মুঠোফোনে বলেন, তাঁরা ১০ জন একটি ট্রলারে করে সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ নিচ্ছেন। নিখোঁজ জেলেরা জীবিত থাকলে এত দিনে (পাঁচ দিন) তাঁদের খোঁজ পাওয়া যেত। এখন জেলেদের অন্তত লাশ উদ্ধার করে পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন। আজ বেলা একটা পর্যন্ত নিখোঁজ জেলেদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগর উত্তাল রয়েছে। তারপরও তাঁরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এফবি ভাই ভাই ট্রলারের উদ্ধার হওয়া জেলেদের সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ জুন বিকেলে উপজেলার তুষখালী বাজার থেকে ১২ জন জেলে ও ৭ জন মাঝি নিয়ে ট্রলারটি মাছ ধরার জন্য বঙ্গোপসাগরের উদ্দেশে রওনা দেয়। পরের দিন বঙ্গোপসাগরে পৌঁছানোর পর তাঁরা সাগরে মাছ ধরা শুরু করেন। গত রোববার রাতে তাঁরা নারকেলবাড়িয়া এলাকায় মাছ ধরছিলেন। রাত সোয়া ১১টার দিকে হঠাৎ একটি বড় ঢেউ এসে ট্রলারটিকে আঘাত করে। মাঝিরা অপ্রস্তুত থাকায় ঢেউয়ের আঘাতে ট্রলারটি উল্টে যায়। এতে ট্রলারে থাকা ১২ জন জেলে ও মাঝির মধ্যে ৭ জন ট্রলারের নিচে আটকা পড়েন। বাকি পাঁচজন পানিতে পড়ে ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসে যান।
নজরুল ইসলাম মাঝিও উল্টে যাওয়া ট্রলারের নিচে আটকা পড়েন। তিনি ট্রলারের নিচ থেকে বের হয়ে অন্য জেলেদের সেখান থেকে বের করে আনেন। এরপর একটি মাছ ধরার ট্রলার যেতে দেখে জেলেরা তাঁদের চিৎকার করে ডাকতে থাকেন। রাত তিনটার দিকে ওই ট্রলার গিয়ে ভেসে থাকা সাত জেলেকে উদ্ধার করেন। পরদিন দুপুর ১২টার দিকে তাঁরা পটুয়াখালীর মহীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে পৌঁছান।
জ্যেষ্ঠ উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ জেলেদের ব্যাপারে নৌ বাহিনী ও কোস্টগার্ডকে তাঁরা জানিয়েছেন। ঘটনাস্থল বঙ্গোপসাগরে হওয়ায় তাঁদের পক্ষে উদ্ধার অভিযান চালানোর সুযোগ নেই।