২৬ বছর ধরে গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঝুড়ি–কুলা বিক্রি করেন নীল কুমার
বাইসাইকেলের সামনে, পেছনে, পাশে ঝুড়ি ও কুলার জিনিস। নীল কুমার বাইসাইকেল চালিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে এসব জিনিসপত্র বিক্রি করেন। ২৬ বছর ধরে এভাবেই জিনিস বিক্রি করা অর্থ দিয়ে সংসার চালাচ্ছেন তিনি।
নীল কুমারের বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বড়বাড়িয়া গ্রামে। এই ব্যবসা করে দুই ছেলে–মেয়েকে পড়াশোনা করিয়েছেন। বিয়ে দিয়েছেন। মা, বাবা, স্ত্রী, ছেলে ও ছেলের বউকে নিয়ে সংসার তাঁর।
বুধবার মিরপুর উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামে নীল কুমারের সঙ্গে দেখা। কথা প্রসঙ্গে বললেন, তাঁর বাবাও একই ব্যবসা করতেন। মাত্র ১২ বছর বয়স থেকে তিনি গ্রামে গামে হেঁটে এসব তৈরি জিনিস বিক্রি করতেন। এখন বাইসাইকেলে করে বিক্রি করছেন। হেঁটে জিনিস বিক্রি করেছেন প্রায় সাত বছর। এরপর ২ হাজার ৪০০ টাকা দিয়ে বাইসাইকেল কেনেন। হেঁটে জিনিস বিক্রি করতে পারতেন তিন থেকে চারটি গ্রামে। আর এখন বাইসাইকেলে করে ঘোরেন সাত থেকে আটটি গ্রামে।
প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা আয় করেন। আয়ের টাকা দিয়ে বড় ছেলে আকাশ কুমারকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়িয়েছেন। মেয়ে পূর্ণিমা কুমারকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়িয়েছেন।
নীল কুমার জানান, বাঁশের তৈরি একটি ঝুড়ি ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করেন। একটি কুলা বিক্রি করেন ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। শ্রমিকের কাজ করে স্বাধীনতা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, এই ব্যবসা ছোট হলেও স্বাধীনতা আছে। তাই গ্রামে গ্রামে ঘুরে এসব জিনিস বিক্রি করেন। পাশের চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলা থেকে এসব জিনিস কিনে বাড়িতে রাখেন। এরপর বাইসাইকেল নিয়ে সেগুলো গ্রামে বিক্রি করতে বের হন। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিক্রি শেষে বাড়িতে ফেরেন।
সংসার কেমন চলছে, জানতে চাইলে নীল কুমার বলেন, ‘বেশ সুখেই আছি। যদিও তরকারির দাম বেড়েছে, তবু সংসার চলে যাচ্ছে। এটাই সুখ, কোনো ঝামেলা নেই।’ বিকেলে বাড়ি ফেরার পথে গ্রামের হাট থেকে তরকারি কিনে বাড়ি ফেরেন তিনি।
নীল কুমারের স্ত্রী রূপালী কুমার মাটিকাটা শ্রমিকের কাজ করেন মাঝেমধ্যে। ছেলে আকাশ কুমার গ্রামের একটি সেলুনে কাজ করেন।