রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগীয় প্রধানের বিরুদ্ধে সহকর্মীকে লাঞ্ছিতের অভিযোগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের সভাপতি (বিভাগীয় প্রধান) অধ্যাপক আতাউর রহমানের বিরুদ্ধে একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিউল ইসলামকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষক।
ঘটনাটি তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি করে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য হুমায়ুন কবির বলেন, উর্দু বিভাগের ঘটনায় তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী শিক্ষক উল্লেখ করেন, গতকাল সকালে ২০২২ সালের এমএ পরীক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক হোছাইন আহমদ কামালীর ব্যক্তিগত চেম্বারে (সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ভবন, রুম নম্বর ৪১৪) পরীক্ষা কমিটির সভা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিভাগীয় সভাপতি অধ্যাপক আতাউর রহমান ওই কক্ষের (৪১৪) পরিবর্তে তাঁর কক্ষে পরীক্ষা কমিটির সভাটি করতে বলেন। তখন তিনি (ভুক্তভোগী) পরীক্ষা কমিটির সভাপতিকে পূর্বনির্ধারিত কক্ষে (৪১৪) সভাটি করার কথা বললে, বিভাগীয় সভাপতি তাঁকে (ভুক্তভোগী) ধমক দিয়ে বলেন, ‘পরীক্ষা কমিটির সভা আমার কক্ষে এবং আমার সামনেই হবে।’ তখন তিনি বিভাগীয় সভাপতিকে বলেন, ‘আমি পরীক্ষা কমিটির সভাপতির সঙ্গে কথা বলছি, আপনার সঙ্গে নয়।’ এ কথা বলার একপর্যায়ে বিভাগীয় সভাপতি তাঁকে তুই-তোকারি, হুমকি–ধমকিসহ মারমুখী আচরণ করে তাঁর ডান হাতে আঘাত করেন। তখন তাঁর হাতে থাকা চায়ের কাপের কারণে তিনি আঘাত পান এবং আঙুল কেটে রক্ত ঝরতে থাকে।
অভিযোগে ভুক্তভোগী শিক্ষক বলেন, সভাপতির মতো দায়িত্বশীল পদে থেকে তাঁর এমন আচরণে তিনি অত্যন্ত মর্মাহত ও শঙ্কিত। বরাবরই তিনি শিক্ষকদের সঙ্গে এমন অসদাচরণ করে আসছেন।
জানতে চাইলে পরীক্ষা কমিটির সদস্য মোকাররম হোসেন মণ্ডল বলেন, বিভাগীয় সভাপতি পরীক্ষা কমিটির সভাটি তাঁর কক্ষে করতে বলেন। তখন সামিউল স্যার বলেন, ‘পরীক্ষা কমিটির সভা পরীক্ষা কমিটির বাইরে অন্য কারও সামনে হতে পারে না।’ পরে বিভাগীয় সভাপতি সামিউল স্যারকে বলেন, ‘সামিউল, মিটিং আমার সামনে এখানে হবে। আমি সভাপতি, আমার আদেশ, সভা এখানেই হবে।’ এখান থেকে তর্ক-বিতর্ক শুরু। একপর্যায়ে তাঁরা সভাপতির কক্ষ ছেড়ে বিভাগের কার্যালয়ে চলে যান। তারপর একটা শব্দ হয়। তখন তাঁরা কার্যালয় থেকে সেখানে গিয়ে দেখেন, রক্ত পড়ে আছে এবং সামিউল স্যারের হাত কাটা।
অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন উর্দু বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আতাউর রহমান। তিনি বলেন, গতকাল এমএ ২০২২ পরীক্ষা কমিটির একটি সভা ছিল। পরীক্ষা কমিটির সভাপতি হোছাইন আহমদ কামালী তাঁর কার্যালয়ে সভা করতে চান এবং জানান, কমিটির সদস্যদের কাছে তিনি নিরাপদ নন ও লাঞ্ছিত হতে পারেন। পরে তিনি সভা করার অনুমতি দিয়ে পাশের কক্ষে চলে যান। সভায় পরীক্ষা কমিটির সভাপতির সঙ্গে তর্ক ও মারমুখী আচরণ করেন সামিউল ও মোকাররম। তিনি হট্টগোল শুনে ওই কক্ষে গিয়ে দেখেন, তাঁরা পরীক্ষা কমিটির সভাপতির সঙ্গে খারাপ আচরণ করছেন। তিনি বাধা দিলে তাঁরা তাঁর সঙ্গে তর্কে জড়ান। এ সময় তিনি পাশের কক্ষে চলে গেলে তাঁরাও তাঁর পেছনে আসেন। একপর্যায়ে সামিউল রাগান্বিত হয়ে তাঁকে আঘাত করতে এসে টেবিলে আঘাত করেন। এ সময় তাঁর হাতে থাকা চায়ের কাপ ভেঙে তাঁর হাত কেটে যায়।
এ বিষয়ে জানতে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক হোছাইন আহমদ কামালীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।