৬০০ মিটার সড়কে সীমাহীন ভোগান্তি

স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসক বারবার তাগাদা দিলেও সিটি করপোরেশন সড়ক সংস্কার করছে না বলে অভিযোগ।

সড়কে তৈরি হওয়া গর্তে বৃষ্টির পানি জমে ভোগান্তি বেড়েছে চলাচলকারীদের। গত সোমবার বিকেলে গাজীপুরের রাজবাড়ি সড়কের কাজী মার্কেট এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

সড়কটিতে এমনিতেই একটি লেভেল ক্রসিং আছে। ট্রেন আসা-যাওয়ার কারণে সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট হয় শহরবাসীর। এর মধ্যে এক বছর ধরে যোগ হয়েছে সড়ক বেহাল। খানাখন্দের কারণে যানবাহন চলছে হেলেদুলে। মাঝেমধ্যেই যানবাহন উল্টে ঘটছে দুর্ঘটনা। দেখা দিচ্ছে দীর্ঘ যানজট। এরপরও টনক নড়ছে না প্রশাসনের।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের রাজবাড়ি সড়কের মাইক্রোস্ট্যান্ড থেকে রাজবাড়ি ঢাল পর্যন্ত প্রায় ৬০০ মিটার সড়কের চিত্র এটি। মূল শহরে যাতায়াতের প্রধান এই সড়কের এক পাশে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন। আরেক পাশে নগর ভবন, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ নানা দপ্তর।

শহরের দক্ষিণ ছায়াবীথি এলাকার বাসিন্দা ও একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিদিন অফিস যাতায়াতের সময় লেভেল ক্রসিংয়ে আটকে এমনিতেই অনেক সময় নষ্ট হয়। তার ওপর এখন ভাঙা সড়কে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। মাঝেমধ্যেই রিকশা উল্টে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। আমাদের কষ্ট দেখার কেউ নেই।’

শিববাড়ি মোড় থেকে একটি সড়ক চলে গেছে ভাওয়াল রাজবাড়ির দিকে (বর্তমান জেলা প্রশাসকের কার্যালয়)। সড়কটির কলাপট্টি এলাকায় লেভেল ক্রসিং। পাশেই জয়দেবপুর রেলস্টেশন। স্থানীয় লোকজন বলছেন, এ ক্রসিং দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৬৪টি ট্রেন আসা–যাওয়া করে। প্রতিবার ট্রেন আসা-যাওয়ায় সময় গড়ে পাঁচ মিনিট যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়। এর মধ্যেই সড়কটির মাইক্রোস্ট্যান্ড থেকে রাজবাড়ি ঢাল পর্যন্ত প্রায় ৬০০ মিটার বেহাল।

সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের বিভিন্ন জায়গায় পিচঢালাই উঠে গেছে। তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। গর্তের কারণে যানবাহন চলছে খুব ধীরগতিতে। মাঝেমধ্যে গর্তে আটকে যাচ্ছে গাড়ি। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন পথচারীরা। একটু বৃষ্টি হলেই এসব গর্তে পানি জমে ভোগান্তি আরও বেড়ে যায় বলে জানান স্থানীয় লোকজন। ৬০০ মিটার সড়কে ছোট-বড় প্রায় ৭০টি গর্ত দেখা যায়।

সড়কটির রাজবাড়ি এলাকায় গাজীপুর জেলা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন। কোথাও আগুন লাগলে এ রাস্তা ধরেই যেতে হয় ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলোকে। কিন্তু সড়কের খানাখন্দের কারণে নির্দিষ্ট সময় গন্তব্যে পৌঁছাতে বেগ পোহাতে হয় তাদের। পাশাপাশি সড়কটির ডান পাশে রথখোলা এলাকায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। প্রতিদিন অসংখ্য অ্যাম্বুলেন্স আসা–যাওয়া করে এ রাস্তা ধরে। গর্তের কারণে রোগীরা ভোগান্তিতে পড়েন।

জয়দেবপুর ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, ‘সড়ক বেহাল থাকলে পানিবাহী গাড়ি নিয়ে নির্দিষ্ট সময় গন্তব্যে যেতে বেগ পোহাতে হয়। আমরা মিটিংয়ে প্রায়ই রাস্তাটির বিষয়ে কথা বলি।’

রাস্তাটি পড়েছে গাজীপুরের সংসদীয় আসন-২–এ। সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিয়মানুযায়ী রাস্তাটি দেখভালের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। এ বিষয়ে আমি অন্তত ১০ বার মুঠোফোনে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। রাস্তাটি মেরামতের জন্য অনুরোধ করেছি। কিন্তু তারা কোনো উদ্যোগ নেয়নি। আমি নিজেও এর ভুক্তভোগী।’

সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম সফিউল আজম বলেন, এ রাস্তায় আরসিসি ঢালাই হবে। তাই আপাতত স্থায়ী কাজ করা যাচ্ছে না। তবে গর্ত হলে নিয়মিত মেরামত করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন জমি অধিগ্রহণ করে দিলেই সড়কের কাজ শুরু হবে বলে দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, এখানে জমি অধিগ্রহণের কোনো বিষয়ই নেই। ডিপিপি প্রজেক্ট করে সিটি করপোরেশন নিজেরাই কাজ করবে। তিনি নিজেও রাস্তাটি মেরামতের জন্য অসংখ্যবার বলেছেন; কিন্তু কাজ হয় না।