জামায়াতের কর্মীরা চাঁদাবাজি, মামলা–বাণিজ্যে জড়িত নেই: শফিকুর
জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা দেশের কোথাও চাঁদাবাজি, দখলে নেই মন্তব্য করে দলটির আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘দেশে পরিবর্তনের পর আমাদের কর্মীরা হাট, জলমহাল, বালুমহাল দখলে ঝাঁপিয়ে পড়েননি। দেশের কোথাও আমাদের কেউ এসব করছেন না। আমাদের কর্মীরা মামলা ও গ্রেপ্তার–বাণিজ্যে জড়িত নেই। তাঁরা জানেন, এগুলো হারাম।’
আজ শনিবার দুপুরে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জেলা জামায়াত আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শফিকুর রহমান এ কথা বলেন। তিনি দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে বক্তব্য শুরু করে বেলা একটার দিকে শেষ করেন। কর্মী সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য দেন জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা তোফায়েল আহমদ খান।
যাঁরা খুন ও গুমে জড়িত, অগ্রাধিকার দিয়ে তাঁদের বিচার করার দাবি জানিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, ‘এটা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য নয়। এটা এ জন্য, যারা খুন করে, খুনি তাদের পরিণতি দেখে যেন অন্যরা শিক্ষা নেয়। মানবসমাজকে কলঙ্কমুক্ত করার জন্যই এই বিচার করতেই হবে।’
জামায়াতের আমির বলেন, ‘আমাদের নেতা-কর্মীদের মনে অনেক কষ্ট, দুঃখ ও ব্যথা আছে। কিন্তু আমরা ক্লিয়ার করেছি, আমরা আইন হাতে তুলে নেব না। আমাদের অনেক নির্যাতন করা হয়েছে। মিথ্যা মামলায় নেতাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। দলের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। সব শেষে দিশাহারা হয়ে আমাদের দলকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’
জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ তুলে জামায়াতের আমির বলেন, ‘আমাদের সন্তানেরা রাস্তায় নেমে ন্যায়বিচার চেয়েছে, তারা বৈষম্যহীন সমাজ চেয়েছে। এত রক্ত দিয়ে যারা আমাদের মুক্ত পরিবেশ দিয়েছে, তাদের স্বপ্নপূরণ করতে হবে। তারা পচা সমাজ চায় না। তারা শ্রেষ্ঠ সমাজ গড়তে চায়। তাই পরস্পরকে সম্মান ও মর্যাদা দিয়ে বৈষম্যহীন, মানবিক দেশ গড়তে হবে। জামায়াতে ইসলামী সেই দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে এগোচ্ছে।’
জামায়াত যদি ক্ষমতায় যায়, শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবে বলে জানিয়েছেন শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘অনেক দেশে পড়াশোনা শেষেই চাকরির ব্যবস্থা হয়ে যায়। আমরা শিক্ষাকে গুরুত্ব দেব। নৈতিক শিক্ষা গুরুত্ব পাবে। শিক্ষা শেষে সনদের সঙ্গে সঙ্গে যেন যোগ্যতা অনুযায়ী মর্যাদাপূর্ণ কাজ পাওয়া যায়, সেটার ব্যবস্থা করা হবে।’
জামায়াতকে নিয়ে অনেকে বদনাম করেন, উল্লেখ করে দলটির আমির বলেন, ‘আমাদের সমালোচনা করুন। যাঁরা সমালোচনা করেন, তাঁরা আমাদের বন্ধু। আমরাও মানুষ, আমাদের ভুল হতে পারে। তবে যে অভিযোগই করা হোক, তার সত্যতা থাকতে হবে। আর যদি এসব মিথ্যা হয়, তাহলে আমাদের পাশে থাকবেন। ভালো কাজে সহযোগিতা করবেন, হৃদয়ে স্থান দেবেন।’
ধর্ম-বর্ণের ভিত্তিতে জামায়াত বিভাজনে বিশ্বাস করে না মন্তব্য করে শফিকুর রহমান বলেন, ‘মেজরিটি, মাইনরিটি বলে কোনো বিষয় নেই। সংবিধান সবাইকে সমান অধিকার দিয়েছে। আমরা সবার সম্মান ও মর্যাদায় বিশ্বাসী।’
জামায়াতের আমির বলেন, ‘আমরা চাই না, দেশে একটা পরিবর্তন হলে বিভিন্ন উপাসনালয়ে পাহারা বসাতে হবে। এমন একটি সামাজিক নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলতে চাই, যেখানে মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, মঠ—কিছুই পাহারা দিতে হবে না। তবে কিছু দুষ্ট লোক তো আছেই, যারা অপকর্ম করে। ৫ আগস্টের পর আমরা একনাগাড়ে ১৫ দিন পাহারার ব্যবস্থা করেছি।’
আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে শফিকুর রহমান বলেন, ‘সাড়ে ১৫ বছর অনেকেই ক্ষমতা দাপিয়ে বেরিয়েছেন। আমাদের ভিসা, টিকিট ছাড়া দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলা হতো। যাঁরা এসব বলতেন, তাঁরাই ভিসা ও টিকিট ছাড়া দেশ ছেড়েছেন। আমরা বলি, ফিরে এসে দেখেন, দেশের কী করে গেছেন, বারোটা বাজিয়ে গেছেন।’
জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মো. মোহাম্মদ আবদুল্লাহর সঞ্চালনায় কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির মো. ফখরুল ইসলাম ও সিলেট জেলা আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান।
কর্মী সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির, হবিগঞ্জ জেলার আমির কাজী মাওলানা মুখলিছুর রহমান, মৌলভীবাজার জেলার আমির মো. শাহেদ আলী, সুনামগঞ্জ জেলার নায়েবে আমির মো. শামস উদ্দিন ও মোমতাজুল হাসান আবেদ, সুনামগঞ্জ পৌর শাখার আমির আবদুস সাত্তার মো. মামুনসহ দলটির বিভিন্ন উপজেলার নেতারা বক্তব্য দেন। মঞ্চে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ঢাকায় শহীদ সুনামগঞ্জের আয়াতুল্লাহর বাবা সিরাজুল ইসলাম ও সোহাগ মিয়ার বাবা আবদুস সালাম।