এমপি আনোয়ারুল আজীম খুন
চার বছর ধরে সাভারে ছিলেন আসামি শিমুল ভূঁইয়া, ভুয়া পাসপোর্টে নেন ফ্ল্যাট ভাড়া
কলকাতায় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম (আনার) খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার শিমুল ভূঁইয়া খুলনা অঞ্চলের একসময়ের দুর্ধর্ষ চরমপন্থী সন্ত্রাসী। তিনি প্রায় চার বছর নাম–পরিচয় গোপন করে পরিবার নিয়ে ঢাকার সাভারে বসবাস করছিলেন। নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন সৈয়দ আমানুল্লাহ নামে। বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় ওই নামে পাসপোর্টের ফটোকপি জমা দেন।
প্রকৃত পরিচয় লুকিয়ে রাখতে শিমুল ভূঁইয়া স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। বাড়ির মালিকসহ ওই ভবন–সংশ্লিষ্টদের সঙ্গেও কথা বলতেন কম।
শিমুল ভূঁইয়া প্রায় চার বছর আগে সাভার উপজেলার শ্যামলাপুরের লুটেরচর এলাকার একটি ভবনের ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। দিনে এক থেকে দুবার তিনি ফ্ল্যাট থেকে বের হতেন; কিছু সময় ভবনের নিচে ছোট শিশুদের সঙ্গে সময় কাটাতেন। শিমুল ভূঁইয়ার এমন সাদামাটা জীবনযাপন দেখেছেন মালিকসহ ভবনের নিরাপত্তারক্ষী ও আশপাশের লোকজন। সম্প্রতি ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম (আনার) হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার এবং প্রকৃত পরিচয় জানতে পেরে বিস্মিত তাঁরা।
শিমুল ভূঁইয়া প্রায় চার বছর আগে সাভার উপজেলার শ্যামলাপুরের লুটেরচর এলাকার একটি ভবনের ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। দিনে এক থেকে দুবার তিনি ফ্ল্যাট থেকে বের হতেন; কিছু সময় ভবনের নিচে ছোট শিশুদের সঙ্গে সময় কাটাতেন।
শ্যামলাপুরের লুটেরচর এলাকায় পাঁচতলা ভবনটির তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন শিমুল ভূঁইয়া। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে সেখানে গিয়ে কথা হয় ভবনের কেয়ারটেকার সোবহান মিয়ার সঙ্গে। শিমুল ভূঁইয়ার ছবি দেখানোর পর তিনি বলেন, ‘উনার নাম আমানুল্লাহ (প্রকৃত নাম শিমুল ভূঁইয়া)। কয়েক বছর আগে তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন। দিনে একবার ফ্ল্যাট থেকে নিচে নামতেন। মাঝেমধ্যে দুবারও নিচে আসতেন। কিছু সময় পর আবার ফ্ল্যাটে উঠে যেতেন। কথা খুবই কম বলতেন।’
ভবনটির মালিক নাজিম উদ্দিন জানান, প্রায় চার বছর আগে বাসাভাড়ার জন্য আসেন শিমুল ভূঁইয়া। তিনি তিন কক্ষবিশিষ্ট তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাট মাসিক ১৫ হাজার টাকায় ভাড়া নেন। ভাড়া নেওয়ার পর ভবনের মালিক জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি চান। জাতীয় পরিচয়পত্র করা হয়নি, তবে পাসপোর্ট আছে বলে ভবনের মালিককে জানান শিমুল ভূঁইয়া। পরে মালিকের কাছে নিজের ছবি ও সৈয়দ আমানুল্লাহ পরিচয়ে বানানো পাসপোর্টের ফটোকপি জমা দেন তিনি। এ ছাড়া তিনি ভবনমালিককে বাসায় স্ত্রী, এক মেয়ে ও কাজের মেয়ে থাকবে এবং পেশা হিসেবে রেন্ট–এ–কার ও জিঞ্জিরার দিকে পার্টনারশিপে মোটরসাইকেলের শোরুমের ব্যবসা রয়েছে বলে জানান।
তাঁর (শিমুল ভূঁইয়া) চলাফেরায় সন্দেহ করার মতো কিছুই ছিল না। তাঁর স্ত্রী মাঝেমধ্যে বাসায় আসতেন। এ ছাড়া খুব বেশি লোকজন যে বাসায় আসতেন এমনও নয়। প্রতি মাসের ৫ তারিখের মধ্যে ভাড়া পরিশোধ করতেন।নাজিম উদ্দিন, বাড়ির মালিক
নাজিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি (শিমুল ভূঁইয়া) খুবই স্বল্পভাষী মানুষ। বাসা থেকে তেমন একটা বের হতেন না। বের হলেও ছোট শিশুদের সঙ্গে কিছু সময় থেকে আবার বাসায় চলে যেতেন। তাঁকে দেখে কোনোভাবেই বোঝার উপায় ছিল না যে তিনি এমন একটি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। তাঁর চলাফেরায় সন্দেহ করার মতো কিছুই ছিল না। তাঁর স্ত্রী মাঝেমধ্যে বাসায় আসতেন। এ ছাড়া খুব বেশি লোকজন যে বাসায় আসতেন এমনও নয়। প্রতি মাসের ৫ তারিখের মধ্যে ভাড়া পরিশোধ করতেন।
গত ১৬ মে রাতে ওই বাসা থেকে শিমুল ভূঁইয়াকে আটক করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ সম্পর্কে নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘রাত সাড়ে ১২টার দিকে সাদাপোশাকে ডিবির বেশ কয়েকজন সদস্য বাসার সামনে আসেন। আমার ছেলে তাঁদের সঙ্গে কথা বলে পরিচয় নিশ্চিত হয়ে গেট খুলে দেয়। তাঁদের মধ্য থেকে পাঁচ–ছয়জন তৃতীয় তলায় আমানুল্লাহর (শিমুল ভূঁইয়ার) ফ্ল্যাটে চলে যান। সেখানে থেকে তাঁকে আটক করে নিয়ে যান তাঁরা।’
ওই ভবনের ঠিক সামনে বসবাসরত একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিমুল ভূঁইয়াকে মাঝেমধ্যে ছোট শিশুদের সঙ্গে বাসার সামনে সময় কাটাতে দেখেছেন তাঁরা। এ ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে তাঁকে মিশতে দেখেননি। তিনি কী করেন, সেটিও জানা নেই তাঁদের। ওই ভবনের প্রায় ১০০ গজ দূরত্বে মো. সিরাজের মুদিদোকান রয়েছে। তিনি বলেন, ‘যাঁকে (শিমুল ভূঁইয়া) গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তিনি এদিকে আসতেন না। ওই বাসার সামনে কয়েকবার দেখেছি তাঁকে।’
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম ১২ মে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় যান। পরদিন কলকাতার নিউ টাউন এলাকার সঞ্জিভা গার্ডেন্সের একটি ফ্ল্যাটে তিনি খুন হন। ওই ফ্ল্যাটের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে কলকাতা পুলিশ বাংলাদেশ পুলিশকে এ তথ্য জানায়। এরপর সৈয়দ শিমুল ভূঁইয়াসহ তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁদের কাছ থেকে আনোয়ারুল আজীমকে হত্যা এবং তাঁর লাশ গুম করার ঘটনার বিস্তারিত তথ্য পায় পুলিশ।