ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাবেক এমপি শিউলি আজাদ গ্রেপ্তার, ৮ দিনের রিমান্ডে
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমকে (শিউলি আজাদ) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে ঢাকার নিকেতনের বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। রাতেই তাঁকে সরাইল থানা–পুলিশের জিম্মায় দেওয়া হয়।
এ সম্পর্কে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি আমাদের জিম্মায় রয়েছেন। আজ তাঁকে আদালতে হাজির করা হবে।’
আবদুর রাজ্জাক জানান, গত ৩ সেপ্টেম্বর সরাইল থানায় করা একটি হত্যা মামলায় উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সরাইল থানা সূত্রে জানা গেছে, ৩ সেপ্টেম্বর উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম, সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীসহ ৬৭ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে সরাইল থানায় একটি হত্যা মামলা হয়। তিনি ওই মামলার ৪ নম্বর আসামি। উপজেলার চুন্টা ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের বাসিন্দা সুলতান উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এতে অজ্ঞাতনামা আরও ২০০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতা করে ২০২১ সালের ২৮ মার্চ হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনের সময় সরাইল বিশ্বরোড মোড় এলাকায় আসামিদের গুলিতে নিহত হন উপজেলার কাটানিশার গ্রামের মুজান মিয়ার ছেলে লিটন মিয়া (২৭)। তিনি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক ছিলেন। ওই ঘটনায় মামলা করেন সুলতান উদ্দিন।
আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
এদিকে উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলি আজাদ) আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক স্বাগত সাম্য এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
লিটন মিয়া হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সরাইল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুর রহমান খান পাঠান বলেন, ‘উম্মে ফাতেমাকে আজ দুপুরে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করেছিলাম। আদালত ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।’
তবে উম্মে ফাতেমার আইনজীবী জয়নাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘অসৎ উদ্দেশ্যে বাদী মামলাটি দায়ের করে একজন সাবেক সংসদ সদস্যের মানহানির চেষ্টা করছেন। নিহত লিটন মিয়ার সঙ্গে সুলতান উদ্দিনের (বাদী) কোনো আত্মীতার সম্পর্ক নেই। এমনকি সে পাড়াপড়শিও নয়।’
উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের তিনজনের আংশিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। তিনি সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি প্রয়াত এ কে এম ইকবাল আজাদের সহধর্মিনী।
ইকবাল আজাদ নিহত হওয়ার দুই বছর পর ২০১৪ সালের ১০ ডিসেম্বর উম্মে ফাতেমা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হন। এরপর ২০২২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের মাধ্যমে দলের কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতাদের উপস্থিতিতে তিনজনের আংশিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক হন উম্মে ফাতেমা। দুই বছরেও ওই কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন।