জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-বেরুনী হলে কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া নিয়ে প্রাধ্যক্ষ কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন হল ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। আজ বুধবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে তালা দেওয়া হয়। হল কার্যালয়ে তালা দেওয়ার পর নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সন্ধ্যা ছয়টার দিকেও তালা ঝুলতে দেখা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকাল সাড়ে আটটার দিকে তালা দেন হলের ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। সঙ্গে কিছু সাধারণ শিক্ষার্থী ছিলেন। এরপর তাঁরা চার দফা দাবিতে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সিকদার মো. জুলকারনাইনের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। প্রাধ্যক্ষ নয়টার দিকে হলে এলে কার্যালয়ে তালা দেওয়া দেখতে পান।
হল কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আল-বেরুনী হলে অফিস সহকারী ও নিরাপত্তাকর্মী পদে নিয়োগের জন্য প্রার্থীদের আজ দেড়টায় নিয়োগ বোর্ডে সাক্ষাৎকার ছিল। কিন্তু তালা দেওয়ার পর অনিবার্য কারণবশত বেলা দুইটার দিকে নিয়োগ বোর্ড বাতিল করে কর্তৃপক্ষ।
হল–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আজ ওই হলে অফিস সহকারী ও নিরাপত্তাকর্মী পদের নিয়োগ বোর্ড ছিল। সেখানে অফিস সহকারী পদে যিনি প্রার্থী রয়েছেন, তিনি আগে থেকে হলে অস্থায়ী কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন। ছাত্রলীগের নেতারা ওই প্রার্থীকে চান না। তাঁরা তাঁদের পছন্দের একজনকে নিয়োগ দিতে কর্তৃপক্ষকে চাপ প্রয়োগ করেন। কিন্তু ছাত্রলীগের দেওয়া প্রস্তাব না মানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি এনামুল হক এনাম, যুগ্ম সম্পাদক চিন্ময় সরকারসহ কয়েকজন নেতার নেতৃত্বে হল কার্যালয়ে তালা দেন হলের নেতা-কর্মীরা। ফলে আজকের নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করা হয়।
তবে নিয়োগে চাপ প্রয়োগের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও আল-বেরুনী হল ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক এনাম। তিনি বলেন, ‘নিয়োগ এবং নিয়োগে লেনদেনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আজ সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর হলের সামনে জটলা দেখি। নিচে এসে জানতে পারি বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রাধ্যক্ষ কার্যালয়ে তালা দিয়েছেন। তাঁদের দাবিগুলো দীর্ঘদিনের। হলের প্রাধ্যক্ষ হলের বিষয়ে উদাসীন। উনি হলকে গুরুত্ব দেন না। আজকের তালা দেওয়ার ঘটনায় ছাত্রলীগের কেউ ছিলেন না। যদি কেউ এমন অভিযোগ করে থাকেন, তাহলে সেটা মনগড়া। তালা দেওয়ার সঙ্গে আজকের নিয়োগ বোর্ডের কোনো সম্পর্ক নেই।’
হল প্রাধ্যক্ষ সিকদার জুলকারনাইন বলেন, ‘আজকের যে ঘটনা ঘটেছে, তা খুবই বিব্রতকর। আমার বাসায় ৩০-৪০ জন শিক্ষার্থী গিয়ে এভাবে আমাকে হলে নিয়ে আসবে, এটা বিব্রতকর। আজ দুজন নিয়োগ হওয়ার কথা ছিল। একজন প্রার্থী আগে থেকে অস্থায়ী কর্মচারী হিসেবে কর্মরত। তাকে ছাত্রলীগের পছন্দ না। কারণ, তারা ওই কর্মচারীকে ডেকেছিল, সে দেখা করেনি। ওই পদে ছাত্রলীগের পছন্দের একজনকে নিয়োগ দিতে বলে আমাকে। কিন্তু আমি নিয়োগ দেওয়ার তো কেউ না। নিয়োগ দেবে নিয়োগ বোর্ড।’
সাধারণ ছাত্রদের পক্ষ থেকে প্রাধ্যক্ষের প্রতি তিনটি দাবি জানানো হয়েছে। দাবিগুলো হলো প্রাধ্যক্ষকে হলে নিয়মিত আসতে হবে, হলের পুকুর পরিষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া, হলে নির্মাণের অসমাপ্ত কাজ শেষ করা এবং হলের সামনের রাস্তার কাজ শেষ করা।
ছাত্রদের দাবির বিষয়ে প্রাধ্যক্ষ সিকদার মো. জুলকারনাইন বলেন, ‘আমার দায়িত্ব নেওয়ার প্রায় এক বছর হলো। আমি রেগুলার হলে আসার চেষ্টা করেছি। পুকুর পরিষ্কারের বিষয়ে ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে জানাবে। হলের বাকি কাজগুলো নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছি। এগুলোও হবে।’
এসব বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।