সিলেটে আ.লীগের ওয়ার্ড কমিটি গঠন নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ৫
সিলেটে মহানগর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধের জেরে দলের নেতা–কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সোমবার রাত সোয়া ১১টার দিকে নগরের আগপাড়া এলাকার কো-অপারেটিভ মাঠে এ ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত পাঁচ নেতা–কর্মী আহত হন।
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব খান ওরফে মাসুমের বোনের স্বামী ফখরুল ইসলাম (৪০) ও বড় ভাই আল মামুন খানকে (৩৮) এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক মহিলাবিষয়ক সম্পাদক তাসলিমা লস্করসহ (৪৫) আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে কো-অপারেটিভ মাঠে মহানগরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন শুরু হয়। আলোচনা সভা শেষে রাত সোয়া ১১টার দিকে মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সিদ্ধান্তে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়।
নতুন কমিটির নাম ঘোষণার পরপরই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা-কর্মী ভোটের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের দাবি জানান। এ সময় মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ নেতা–কর্মীরা বিভিন্ন স্লোগান দিলে সেখানে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে সম্মেলনস্থলের চেয়ার ভাঙচুর করেন তাঁরা। এ সময় দলের নেতা-কর্মীরা দুই পক্ষে বিভক্ত হয়ে লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান।
ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বলেন, সম্মেলনে সভাপতি পদে চারজন ও সাধারণ সম্পাদক পদে পাঁচজন প্রার্থী ছিলেন। পদপ্রত্যাশী কয়েকজন ভোটাভুটির মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব বাছাইয়ের দাবি জানান। তবে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বস্থানীয় নেতারা বাছাইয়ের মাধ্যমে মো. সাজুয়ান আহমদকে সভাপতি, শফিকুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক ও মো. আবদুল মুকিতকে প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি ঘোষণা দেন। কমিটি ঘোষণার পরপরই তা বাতিলের দাবিতে অন্য পদপ্রত্যাশীদের কর্মী-সমর্থকেরা স্লোগান দিতে শুরু করেন। তাঁদের দাবি, ব্যক্তিস্বার্থে এ পকেট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ জন্য দলের কর্মী-সমর্থকেরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
তবে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সভাপতি মো. সাজুয়ান আহমদ দাবি করেন, সম্মেলন সুষ্ঠুভাবে শেষ হয়েছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
তবে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একাধিক কর্মী বলেন, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী সব নেতার কর্মী-সমর্থকেরাই পক্ষে-বিপক্ষে সংঘর্ষে অংশ নেন। কমিটি গঠন নিয়ে নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ শুরু হলে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন সম্মেলনস্থল থেকে চলে যান। পরে সংঘর্ষ শুরুর একপর্যায়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ, সহসভাপতি বিজিত চৌধুরীসহ শীর্ষস্থানীয় অন্যান্য নেতাও সম্মেলনস্থল ত্যাগ করেন।
সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘পদপ্রত্যাশী সবার সম্মতির ভিত্তিতেই মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয় নেতারা নতুন কমিটি গঠন করে দিয়েছে। শরীর কিছুটা অসুস্থ থাকায় কমিটি ঘোষণার পরপরই আমি চলে আসি। পরে চাওয়া-পাওয়া পূরণ হওয়া, না-হওয়া নিয়ে কিছু উত্তেজনা হয়েছে। তবে আমি থাকা অবস্থায় সংঘর্ষের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, কমিটি মনঃপুত না হওয়ায় কয়েকজন কিছু চেয়ার ভেঙেছেন, বিশৃঙ্খলা করেছেন। পরে বাইরে থেকে আসা সন্দেহভাজন কিছু ব্যক্তি সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। অন্য কেউ ইন্ধন দিয়ে এ সংঘর্ষ ঘটিয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।