পঞ্চগড়ে পুলিশ–বিক্ষোভকারী সংঘর্ষ, আহমদিয়াদের বাড়িঘরে আগুন
পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করার সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে হয়েছে। জুমার নামাজ শেষে আজ শুক্রবার বেলা দুইটার পর পঞ্চগড় শহরের প্রাণকেন্দ্র চৌরঙ্গী মোড়ে এ সংঘর্ষ হয়। পরে ১০টি বাড়িঘর ও ৪টি দোকানে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ট্রাফিক পুলিশের একটি কার্যালয়। এ ঘটনায় ৩ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
আহত ব্যক্তিরা স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে প্রাথমিকভাবে আহত ব্যক্তিদের নাম জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জুমার নামাজ শেষে বিভিন্ন মসজিদ থেকে লোকজন বেরিয়ে চৌরঙ্গী মোড়ে সমবেত হন। পরে তাঁরা মিছিল বের করেন। মিছিল থেকে ইটপাটকেল ছোড়া হলে পুলিশ বাধা দেয়। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। এতে তিন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা শহরের ধাক্কামারা এলাকার ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয় পুড়িয়ে দেন।
আজ বিকেল পৌনে চারটার দিকে জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এখনো পরিস্থিতি উত্তপ্ত। পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা চলছে।
সংঘর্ষ চলাকালে পঞ্চগড় শহরের পাশে আহম্মদনগর এলাকায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের ১০টি বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়েছে। পঞ্চগড় শহরের একটি বাজারের ৪টি দোকানের মাল বের করে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আছেন। মুসল্লিদের হামলায় পুলিশ ও বিজিবির গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করছে।
এদিকে শহরের মূল প্রবেশপথ করতোয়া সেতুর মাঝখানে মুসল্লিরা বাঁশ ফেলে ও আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এতে যানবাহনসহ পথচারীদের চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। পরে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পথচারীদের চলাচল শুরু হয়। চৌরঙ্গী মোড়ে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত উভয় পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে ছিল।
বিকেল পাঁচটার দিকে জেলা পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা প্রথম আলো বলেন, এখনো পরিস্থিতি উত্তপ্ত। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে তেঁতুলিয়া-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পঞ্চগড় শাখাসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা। পরে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের বেশ কয়েকটি বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে।
পুলিশ ও সংগঠনগুলো সূত্রে জানা যায়, আহম্মদনগর এলাকায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের আগামী শুক্র, শনি ও রোববার সালানা জলসার আয়োজন করা হয়েছে। এ জলসা বন্ধ ঘোষণার দাবিতে গতকাল বেলা ১১টার দিকে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পঞ্চগড় শাখা, সম্মিলিত খতমে নবুয়ত সংরক্ষণ পরিষদ, ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি, ইমাম-মোয়াজ্জিন কল্যাণ সমিতি, পঞ্চগড় কওমি ওলামা পরিষদ ও জাতীয় ওলামা মাশায়েক আইম্মা পরিষদের শত শত লোক মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় শহরে প্রবেশের প্রধান সড়কগুলো বাঁশ ফেলে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন। পরে বেশ কিছু আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকের বেশ কয়েকটি বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।