এলজিইডি কর্মকর্তাদের মারধরের মামলায় আওয়ামী ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কারাগারে
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় সুতিয়াপাড় খাল পুনঃখনন বন্ধ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) চার কর্মকর্তাকে মারধরের মামলায় আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই নেতাকে আজ শনিবার কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে রসাইতলা গ্রামের খাল খনন করতে গেলে মারধরে ঘটনা ঘটে। ওই দিনই ১১ জনের বিরুদ্ধে নালিতাবাড়ী থানায় মামলা করা হয়। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে গতকাল শুক্রবার বিকেলে উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম (৪৫) ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি জাকারিয়াকে (৩৫) গ্রেপ্তার করে। শনিবার দুপুরে তাঁদের আদালতে পাঠানো হলে বিচারক তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ক্ষুদ্রাকার পানিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প-২–এর অধীনে উপজেলার ফুলপুর বান্দেরবাজার থেকে রসাইতলা কাঁকরামারি পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার সুতিয়ার খাল পুনঃখননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে সুতিয়ারপাড় খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির মাধ্যমে খালটি খননের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। গত বৃহস্পতিবার রসাইতলা গ্রামে দুটি এক্সকাভেটর (খননযন্ত্র) নিয়ে কাজ শুরু করে কর্তৃপক্ষ। দুপুরের দিকে কাকরকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে ১৫-২০ জন খননকাজে বাধা দেন।
এ সময় তাঁরা খননকাজের তদারকের দায়িত্বে থাকা এলজিইডি শেরপুর কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী হাসানুর রহমান, উপসহকারী প্রকৌশলী গৌতম বিশ্বাস ও কাজী মঈন উদ্দিন ও জেনারেল ফ্যাসিলিটেটর মেহেদী হাসানকে মারধর করেন। পরে আহত ব্যক্তিদের পুলিশি সহায়তায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এদিকে এলজিইডির কর্মকর্তাদের মারধরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
সহকারী প্রকৌশলী হাসানুর রহমান বলেন, আমিনুল ইসলামসহ কতিপয় ব্যক্তি তাঁদের কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আমিনুল স্থানীয় কয়েকজন কৃষক নিয়ে হামলা চালিয়ে তাঁদের মারধর করেন।
পরে বৃহস্পতিবার রাতে হাসানুর রহমান বাদী হয়ে আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জাকারিয়া, ইউপি সদস্য জমশেদ আলীসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জনকে আসামি করে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
এদিকে শুক্রবার সকালে আমিনুল ইসলাম কৃষকদের নিয়ে খাল খনন বন্ধ করার দাবিতে সুতিয়াপাড় বাজারে মিছিল বের করেন। পরে পুলিশ শুক্রবার বিকেলে অভিযুক্ত আমিনুল ইসলামকে সুতিয়ার বাজার থেকে গ্রেপ্তার করে। সন্ধ্যায় আমিনুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে পৌর শহরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তাঁর অনুসারীরা। এ সময় উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি জাকারিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
খাল খননের বিষয়ে রসাইতলা গ্রামের এক কৃষক বলেন, খালটি এমনিতেই মরা। এটি খনন করে পানি দিলে কৃষকেরা খুব সহজে বোরো মৌসুমে খেতে সেচ দিতে পারবেন। কিন্তু অন্য এলাকার কৃষকেরা তা আবার চান না।
পলাশিয়া গ্রামের এক কৃষক বলেন, এখন বোরো আবাদ চলছে। এ সময় খাল খনন করা হলে খালটি একেবারে শুকিয়ে যাবে। তখন তাঁরা খেতে সেচ দিতে পারবেন না। বোরো আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাঁদের দাবি, বোরো আবাদ শেষ হলে খালটির পুনঃখনন কাজ শুরু করা হোক।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমিনুলসহ স্থানীয় কয়েকজন ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন। ওই চাঁদা না পেয়ে কৃষকদের ভুল বুঝিয়ে তাঁদের কর্মকর্তাদের লোকদের ওপর হামলা চালিয়ে মারধর করেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে থানায় মামলা করা হয়েছে।
নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল আলম ভূঁইয়া বলেন, তিন দিনের রিমান্ড আবেদন করে ওই দুই ব্যক্তিকে আদালতের মাধ্যমে শেরপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আগামী সোমবার শুনানির তারিখ ধার্য করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।