‘ও ভাইরে, আমার আর কিছুই রইল না। আমি এখন কারে নিয়া বাঁচমু।’ আজ বুধবার সকাল নয়টার দিকে সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে এসব বলে আহাজারি করতে করতে মূর্ছা যান সাবেরা বেগম। তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে মাথায় পানি দিচ্ছিলেন ভাই ফারুক মিয়া।
আজ ভোরে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার নাজিরবাজারে ট্রাক ও পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে যে ১৪ জন নিহত হয়েছেন, তাঁদের একজন সাবেরার স্বামী একলিম মিয়া। তিনি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নের চাতলপাড় গ্রামের বাসিন্দা। পরিবার নিয়ে তিনি সিলেট নগরের পীর মহল্লা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। একলিম-সাবেরা দম্পতির চার মেয়ে ও এক ছেলে আছে।
আজ ভোরে দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিরা সবাই ঢালাইয়ের শ্রমিক ছিলেন। তাঁরা সিলেট নগরের আম্বরখানা থেকে ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজারে যাচ্ছিলেন। নাজিরবাজারে ঢাকার দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে ওই শ্রমিকদের মধ্যে ১৪ জন প্রাণ হারান
আজ সকাল থেকে নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের আহাজারি আর আর্তনাদে সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। সময় যতই বাড়ছিল, ভিড় বাড়ছিল নিহত ও আহত ব্যক্তিদের স্বজনদের।
আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে আহাজারি করছিলেন জোছনা বেগম (৩৫)। তাঁর স্বামী সাধু মিয়া (৫০) এই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন ভাই রুবেল মিয়া।
সাধু মিয়া সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার মধুপুরের বাসিন্দা। তিনি স্ত্রী জোছনা বেগমসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নগরের আম্বরখানা এলাকায় বসবাস করতেন। শ্রমিক সাধু মিয়া আজ ভোরে কাজের জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। পরে সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে এক ব্যক্তি স্ত্রীর মুঠোফোনে ফোন দিয়ে দুর্ঘটনার বিষয়টি জানান।
রুবেল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, বোনের ফোন পেয়ে তিনি তড়িঘড়ি করে সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে এসেছিলেন। আসার পর বোনজামাই মারা যাওয়ার বিষয়টি তিনি জানতে পারেন। তবে সে সময় তিনি বোনকে বিষয়টি জানাননি। সকাল সাড়ে আটটার দিকে বোনকে স্বামীর মরদেহ দেখিয়েছেন। এর পর থেকে বিলাপ থামছে না জোছনা বেগমের। তিনি বলেন, স্বামীর মরদেহ দেখার পর কয়েক দফা অচেতন হয়ে পড়েছেন বোন। এখন তাঁকে নিয়ে তিনি চিন্তিত।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে দাঁড়িয়ে কান্না করছিলেন মো. হৃদয়। তিনি দুর্ঘটনায় নিহত সৌরভ মিয়ার (২৭) ফুফাতো ভাই। হৃদয় বলেন, চার ভাইয়ের মধ্যে তৃতীয় সৌরভ। কাজ করার জন্য দিরাইয়ের ভাটিপাড়া থেকে সিলেটে এসে থাকছিলেন তিনি। সৌরভের মৃত্যুর বিষয়টি সকালে অপরিচিত এক ব্যক্তি মুঠোফোনে জানিয়েছেন। পরে তিনি তাঁর বাবা শাহ আলমকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন।
সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও লাশঘরের সামনে হতাহত ব্যক্তিদের তিন শতাধিক স্বজন ভিড় করেন। অনেকে স্বজনদের খুঁজছিলেন। অনেকে ভিড়ের মধ্যে কান্না করছিলেন।