দিনাজপুরে স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াডে এসে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা
বৃষ্টিস্নাত স্নিগ্ধ সকাল। বৃষ্টি শেষে হঠাৎ রোদের ঝিলিক। সঙ্গে ভ্যাপসা গরম। এরই মধ্যে দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের প্রধান ফটক দিয়ে একজন-দুজন করে শিক্ষার্থীরা প্রবেশ করতে থাকে। আজ শুক্রবার সকালে সাড়ে আটটার মধ্যে পলিটেকনিকের মাঠ শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে। তারা এসেছে স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াডে অংশ নিতে। সেখানে উৎসবমুখর পরিবেশে উচ্ছ্বসিত সবাই।
যক্ষ্মার বিস্তার রোধ ও স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াড। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডির অর্থায়নে ও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) পরিচালনায় প্রথম আলো এই স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াডের আয়োজন করেছে। এতে সহযোগিতা করছে প্রথম আলো বন্ধুসভা।
আজ সকাল সাড়ে নয়টায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মাঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে বেলুন উড়িয়ে স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াডের উদ্বোধন করেন জেলা সিভিল সার্জন এ এইচ এম বোরহানুল ইসলাম সিদ্দীকি ও প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ওয়াদুদ মন্ডল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বন্ধুসভার উপদেষ্টা ও দিনাজপুর জিলা স্কুলের শিক্ষক শাহজাহান সাজু, আইসিডিডিআরবির সহকারী কর্মসূচি ব্যবস্থাপক সফিকুল ইসলাম, প্রথম আলোর দিনাজপুর প্রতিনিধি রাজিউল ইসলাম ও আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক (বিপণন) ইমরান আলী প্রমুখ।
উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উদ্বোধনী বক্তব্যে সিভিল সার্জন এ এইচ এম বোরহানুল ইসলাম সিদ্দীকি বলেন, ‘দেশে প্রথমবারের মতো এ ধরনের স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াড আয়োজন করা হয়েছে। এটি একটি দারুণ উদ্যোগ। মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতায় এই উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হতে সহায়ক হবে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়াশোনার আগ্রহ তৈরি হবে। চিকিৎসক হওয়ার উৎসাহ বৃদ্ধি পাবে। কারণ, এই শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার তৈরি হবে। সৃজনশীল ও সৃষ্টিশীল মানুষ গড়ে উঠবে।’
উদ্বোধনের পর বন্ধুসভার বন্ধুরা সারবদ্ধভাবে শিক্ষার্থীদের কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে ৩০ মিনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা শেষে চলে উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজ। পাশাপাশি চলে দেয়ালিকা প্রদর্শনী প্রতিযোগিতা। সেখানে বিচারকেরা শিক্ষার্থীদের তৈরি করা দেয়ালিকা দেখে বিচারকার্য পরিচালনা করেন। এরপর মিলনায়তনে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে প্রশ্নোত্তর পর্ব।
স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াড ও দেয়ালিকা প্রতিযোগিতায় জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়। স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বন্ধুসভার সাবেক সভাপতি মুনিরা শাহনাজ চৌধুরী। সবশেষে পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে প্রাইমারি, জুনিয়র, সেকেন্ডারি—এ তিন ক্যাটাগরিতে ৩০ জন বিজয়ী নির্বাচিত করা হবে। যারা ঢাকায় জাতীয় স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে। বিজয়ীদের সনদ, মেডেল ও টি-শার্ট দেওয়া হবে।
শারমীন আক্তার নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘গতকাল রাতে বিদ্যুৎ ছিল না। আমাদের বাড়ি দিনাজপুর উপশহর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে ছোট গুড়গোলা এলাকায়। গতকাল ছেলেকে তার এক বন্ধুর বাসায় নিয়ে যাই। সেখানে দুই বন্ধু মিলে রাত ১০টা পর্যন্ত মোমবাতি জ্বালিয়ে দেয়ালিকা তৈরি করেছে। ছেলেদের এমন আগ্রহ দেখে খুব আনন্দ লাগছে। তা ছাড়া এখনকার শিক্ষা কারিকুলামের সঙ্গে এমন আয়োজনের বেশ মিল রয়েছে। এ জন্য অভিভাবকদেরও আগ্রহ অনেক বেশি।’
দিনাজপুর জিলা স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাফায়েত আবীর বলে, এখানে এসে তার খুব ভালো লাগছে। এই পরীক্ষাটির জন্য পড়তে গিয়ে কয়েক দিন অনেক নতুন নতুন বিষয়ে জানতে পেরেছে সে।