কক্সবাজার সৈকতে হঠাৎ কেন দেখা দিল প্লাস্টিকের দানব

কক্সবাজার সৈকতে তৈরি প্লাস্টিক বর্জ্যের ভাস্কর্য। গতকাল সন্ধ্যায় তোলাপ্রথম আলো

সমুদ্রসৈকতে নামতেই চোখে পড়ে মানুষ আকৃতির ৫০ ফুট উঁচু বিশাল এক দানব। দুই পাশে আরও দুটির উপস্থিতি। সন্ধ্যার আলো–আঁধারির পরিবেশে সৈকতে দৈত্যদানব দেখে লোকজনের ভিড় জমে যায়। কৌতূহলী মানুষজনের প্রশ্ন, কী করে এল এসব। উত্তর মিলতে দেরিও হলো না। সৈকত থেকে সংগ্রহ করা প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে এমন ভাস্কর্য তৈরি হয়েছে। উদ্দেশ্য, দূষণ সম্পর্কে মানুষকে জানানো।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় এমন দৃশ্য নজরে পড়ে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের বালুচরে। সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে পর্যটকসহ লোকজনকে সচেতন করতে ‘প্লাস্টিক দানব’ ভাস্কর্য নির্মাণ করা হচ্ছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে প্লাস্টিকের দানব ভাস্কর্য। আগামীকাল বুধবার সকাল ১০টায় দানব ভাস্কর্যের উদ্বোধন করবেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। এরপর সবার জন্য ভাস্কর্যটি উন্মুক্ত রাখা হবে। প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে দানব ভাস্কর্য নির্মাণ করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের একদল শিল্পী। প্লাস্টিক বর্জ্যের সঙ্গে কাঠ, পেরেক ও আঠা লাগিয়ে তৈরি হচ্ছে ৫০ ফুট উচ্চতার দানব ভাস্কর্য। দুই পাশের দুটি দৈত্য ভাস্কর্যের উচ্চতা ১৫ ফুট।

গত ৭ নভেম্বর কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের জন্য ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর’ ও স্থানীয়দের জন্য ‘প্লাস্টিক একচেঞ্জ মার্কেট’ উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। যেখানে প্লাস্টিক বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়া খালি পাত্র, বোতল ও পলিথিনের মোড়কের বিনিময়ে যে কেউ নিচ্ছেন চাল, ডাল, তেল, চিনি, লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য । এই কার্যক্রম থেকেই অন্তত ১০ মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। ভাস্কর্য তৈরিতে এসব প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়েছে।

আয়োজকেরা জানান, সৈকতের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন সমাগম ঘটছে লাখো পর্যটকের। সৈকতের বালিয়াড়ি ও সাগরের পানিতে ছড়িয়ে পড়ছে প্লাস্টিক পণ্যসামগ্রীর বর্জ্য। তাতে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে দূষণ এবং হুমকির মুখে পড়ছে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য। এ জন্য প্রাণপ্রকৃতির দূষণরোধে সচেতনতা সৃষ্টিতে ভাস্কর্য তৈরি হচ্ছে।

২০২২ সালেও একই সৈকতে আরেকটি প্লাস্টিক দানব ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছিল। এর উচ্চতা ৪২ ফুট। তখন পর্যটকসহ লাখো মানুষ দানব ভাস্কর্য প্রদর্শন করেন। এবার সেই দানব আরও ভয়ংকর রূপে ফিরে এসেছে। সঙ্গে নিয়ে এসেছে আরও দুটি দানব। এর অর্থ হলো সমস্যা-সংকট কমেনি বরং আরও বেড়েছে। সমুদ্র থেকে উঠে আসা এই দৈত্য-দানব মানবজাতিকে ধীরে ধীরে গ্রাস করছে। পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করছে। মানুষ যদি সচেতন হয়ে প্লাস্টিক ব্যবহার কমিয়ে দেয় ও রিসাইকেল করে তবেই এই দানব থেকে মুক্তি মেলবে।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক মুহাম্মদ মুবারক প্রথম আলোকে বলেন, এক মাস ধরে কক্সবাজার, উখিয়ার ইনানী ও টেকনাফের সমুদ্রসৈকত থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে অন্তত ১০ মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য। এসব বর্জ্য দিয়ে ‘প্লাস্টিক দানব’ ভাস্কর্য তৈরি হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগামীকাল বুধবার সকালে উদ্বোধনের পর এটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, ‘সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটক ও স্থানীয়দের মধ্যে প্লাস্টিক বর্জ্যের দূষণ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে ভিন্নধর্মী এ উদ্যোগ ভূমিকা রাখবে। আমরা চাই বিশ্বের দীর্ঘতম এই সমুদ্রসৈকত দূষণমুক্ত থাকুক।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ভাস্কর ও শিল্পী আবীর কর্মকার বলেন, প্লাস্টিক বর্জ্যের পাশাপাশি ভাস্কর্যে ব্যবহার হচ্ছে কাঠ, পেরেক, আঠাসহ কিছু উপকরণ। শিল্পীদের দাবি, এটি এশিয়ার সর্বোচ্চ প্লাস্টিক দানব। দৈত্যদানবের ভয়ংকর রূপের মতো প্লাস্টিক বর্জ্যের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে লোকজন সচেতন হবেন। পাশাপাশি প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারে সজাগ থাকবেন বলে তাঁদের আশা।