রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি দেখতে কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরীপাড়ার জেটিঘাট দিয়ে মিয়ানমারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে ২০ সদস্যের রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলটি। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় নাফ নদীর চৌধুরীপাড়া জেটি দিয়ে দ্রুতগতির দুটি জলযানে (স্পিডবোট) চড়ে রোহিঙ্গাদের রাখাইন রাজ্যে জেলা শহর মংডুর দিকে নেওয়া হচ্ছে। নাফ নদীতে প্রতিনিধিদলকে নিরাপত্তা দিচ্ছে বিজিবি ও কোস্টগার্ড বাহিনী।
দলটি মিয়ানমারের মংডু ট্রানজিট ক্যাম্পে পৌঁছার পর সেখানকার আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন গ্রাম ও প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তুত করা অবকাঠামো দেখানো হবে। রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলকে সহযোগিতার জন্য আছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি সরকারি সংস্থার আরও কয়েক সদস্য। তবে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে রাখাইন পরিস্থিতি দেখতে যাচ্ছেন না জাতিসংঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের কোনো প্রতিনিধি।
পুলিশ সূত্র জানায়, মিয়ানমারের উদ্দেশে রওনা দেওয়া ২০ জন রোহিঙ্গা প্রতিনিধিকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতেই টেকনাফে তিনটি আশ্রয়শিবির থেকে গাড়িতে করে ১২ কিলোমিটার দূরের টেকনাফ পৌরসভার নাইট্যংপাড়ায় বন বিভাগের একটি বাংলোতে রাখা হয়। দলে নারী আছেন তিনজন। বাংলোতে রাতযাপনের ব্যবস্থা করা হয়। আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের বাসে করে নেওয়া হয় দেড় কিলোমিটার দূরে টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরীপাড়ার জেটিঘাটে।
টেকনাফ থেকে রওনা হওয়ার আগে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলের এক সদস্য মোহাম্মদ ফারুখ (৪০) প্রথম আলোকে বলেন, ‘আঁরা বর্মাত যাইদ্দে (যাচ্ছি) আরাকানর (রাখাইন রাজ্যের) অবস্থা (পরিস্থিতি) চাইবল্যাই। বেগগুন (সবকিছু) ঠিকঠাক থাহিলে রোয়াইঙ্গাত্তুন (সব রোহিঙ্গার) ফিরি যাইতে হন (কোনো) সমস্যা ন’অঁইব (হবে না)।’ ফারুখ এসেছেন টেকনাফের শালবাগান আশ্রয়শিবির থেকে। তিনি ওই আশ্রয়শিবিরের সি-৪ ব্লকের বাসিন্দা মো. ইউনুসের ছেলে।
রাখাইনের পরিস্থিতি দেখতে যাচ্ছেন টেকনাফের লেদা আশ্রয়শিবিরের ( ক্যাম্প-২৪) বি-২ ব্লকের দিল মোহাম্মদের ছেলে মোহাম্মদ তাহের। নাফ নদীর জেটিঘাটে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মিয়ানমারের মংডু শহরে পৌঁছে তাঁদের (রোহিঙ্গাদের) কোথায় নেওয়া হবে, তার কিছুই জানানো হয়নি। তবে আশ্রয়শিবির ত্যাগের আগে ক্যাম্প ইনচার্জের পক্ষ থেকে তাঁদের বলা হয়েছে, প্রত্যাবাসন শুরু হবে। তার আগে রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি এবং প্রস্তুতি ঠিক আছে কি না, দেখার প্রয়োজন আছে। সে কারণে তাঁদের পাঠানো হচ্ছে।
জেটিঘাটে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলের রাখাইন সফর নিয়ে উপস্থিত গণমাধ্যমকে মন্তব্য করতে রাজি হননি রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলের প্রধান মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তবে গতকাল রাতে তিনি বলেছিলেন, সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় দীর্ঘ ছয় বছর পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর পথ খুলতে যাচ্ছে। প্রথম ধাপে ১ হাজার ১৭৬ জন রোহিঙ্গাকে রাখাইনে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা চলছে।
আজ বেলা তিনটার দিকে রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলের সদস্যদের নাফ নদী অতিক্রম করে পুনরায় টেকনাফ ফিরে আসার কথা রয়েছে।
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩ আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর কয়েক মাসে। রোহিঙ্গা ঢলের ছয় বছরেও একজন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। যদিও এর আগে দুইবার প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিয়েও রোহিঙ্গাদের অনীহার কারণে ভন্ডুল হয়েছিল।