পাবনায় খালের মুখে অপরিকল্পিত কালভার্ট

ভাঙ্গুরা উপজেলার পাখরঘাটা গ্রামে একটি সরকারি খালের মুখে একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। ব্যাহত হচ্ছে ফসল আবাদ।

পানিনিষ্কাশনের খাল দখল করে রাস্তা ও দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। সম্প্রতি পাবনার ভাঙ্গুড়ার পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের পাথরঘাটায়ছবি: প্রথম আলো

পাবনার ভাঙ্গুড়ায় পানিনিষ্কাশনের সরকারি খাল দখল করে মাটি ভরাট ও অপরিকল্পিতভাবে কালভার্ট নির্মাণে করায় শতাধিক বিঘা আবাদি জমি বছরের অধিকাংশ সময় জলাবদ্ধ হয়ে থাকছে। এতে জমিগুলোতে ফসল আবাদ ব্যাহত হয়ে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ বিষয়ে উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের পাথরঘাটা গ্রামের ৫০ জন কৃষক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন। অবিলম্বে তাঁরা খালটি দখলমুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন।

অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী কৃষকেরা জানিয়েছেন, পাথরঘাটা গ্রামের পাথরঘাটা মৌজার বেড়ের বিল নামক মাঠে তাঁদের শতাধিক বিঘা ফসলি জমি রয়েছে। জমিগুলোতে তাঁরা বোরো ধান ও রবিশস্য আবাদ করতেন। বর্ষা মৌসুমের পর এসব জমির পানি গ্রামের পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদের পাশের সরকারি খাল দিয়ে বড়াল নদে চলে যেত।

কৃষকদের আবেদনটি পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। খুব শিগগির সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নাজমুন নাহার, ইউএনও, ভাঙ্গুড়া উপজেলা

এরপর তাঁরা জমিতে চাষাবাদ শুরু করতেন। কিন্তু বছর কয়েক আগে খালের মুখে একটি কালভার্ট তৈরি করা হয়। কালভার্টটি সমতল ভূমির চাইতে উঁচু হয়ে যাওয়ায় পানিনিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হতে থাকে। এর মধ্যে খাল দখলের প্রতিযোগিতা শুরু করেন স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি। তাঁদের মধ্যে গ্রামের আনসার আলী নামের এক ব্যক্তি খালের একাংশ দখল করে রাস্তা নির্মাণ ও আবু সাঈদ নামের অপর একজন দখল করে দোকানঘর নির্মাণ করেন। এতে পুরো খালটি আটকে পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অভিযুক্ত দুই দখলদারের মধ্যে আনসার আলী বলেন, ‘আমি খাল দখল করিনি। পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রেখে কাঠের সাঁকো দিয়েছি। প্রশাসন এটা তুলে দিতে বললে তুলে দেব।’ অপর দখলদার আবু সাঈদ বলেন, ‘আমি সরকারি কোনো জমি ভরাট করিনি। নিজের জমি ভরাট করে দোকান তৈরি করেছি। মেপে দেখলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে।’

কৃষকদের দাবি, অপরিকল্পিত কালভার্ট নির্মাণ এবং খাল দখলের কারণে কয়েক বছর ধরে বিলের পানি আর বের হতে পারছে না। তাঁদের জমিগুলো বছরের অধিকাংশ সময় জলাবদ্ধ হয়ে থাকছে। তাঁরা কোনো ফসল আবাদ করতে না পেরে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই সরকারি খালটি দখলমুক্ত চান ভুক্তভোগীরা।

গত রোববার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, বিলে এখন পানি নেই। পানি প্রবেশের খালের মুখে একটি কালভার্ট। খালটিও এখন পানিশূন্য। প্রায় ২০ ফুট প্রশস্ত খালটির একদিকে মাত্র ৩ ফুট বাকি রেখে বাকিটা ভরাট করে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। অন্যদিকে আবার পুরোটা ভরাট করে তৈরি হয়েছে দোকানঘর। কেউ কেউ আবার খালের অর্ধেক অংশ দখল করে বাড়ি নির্মাণ করেছেন। পানিনিষ্কাশনের আর কোনো পথ নেই। আবদুস ছাত্তার নামের অপর এক কৃষক বলেন, কিছুদিনের মধ্যেই বিলে বর্ষার পানি আসবে। তার আগে খালটি দখলমুক্ত করা না গেলে আগামী বছরও বিলটি জলাবদ্ধ থাকবে। অবিলম্বে খালটি দখলমুক্ত করার দাবি সবার।

উদ্যোগ নিয়েও খালটি দখলমুক্ত করা যায়নি উল্লেখ করে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জুয়েল আহম্মেদ বলেন, খালটি ভরাটের কারণে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

খালটির বিষয়ে ভাঙ্গুড়ার ইউএনও নাজমুন নাহার বলেন, ‘কৃষকদের আবেদনটি পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। খুব শিগগির সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’