শ্রমিক বিক্ষোভ থেকে গাজীপুরে পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা, মহাসড়ক অবরোধ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির সামনে শ্রমিকদের বিক্ষোভ। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে
ছবি: প্রথম আলো

মজুরি বাড়ানোর দাবিতে পোশাকশ্রমিকদের চলমান বিক্ষোভ থেকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক বাজার এলাকায় অবস্থিত পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা করা হয়েছে। উত্তেজিত শ্রমিকেরা ফাঁড়ির ফটক, কার্যালয়ের কাচ ও সাইনবোর্ড ভাঙচুর করেছেন। আজ মঙ্গলবার সকালে এ ঘটনা ঘটে।

কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকবর আলী খান বলেন, কয়েক হাজার শ্রমিক মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ সকাল থেকে মৌচাক বাজার এলাকায় শ্রমিকেরা বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় মহাসড়কে ১০-১২টি যানবাহন ভাঙচুর করেন তাঁরা। শিল্প পুলিশ ও থানা-পুলিশ তাঁদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে শত শত শ্রমিক ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশকে ধাওয়া দেন। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ মৌচাক বাজার এলাকায় অবস্থিত কালিয়াকৈর থানাধীন পুলিশ ফাঁড়িতে অবস্থান নেয়। এ সময় শ্রমিকেরা উত্তেজিত হয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালান।

আরও পড়ুন

অধিকাংশ কারখানা বন্ধ ঘোষণা

সাত দিন ধরে শ্রমিকদের অসন্তোষের কারণে আজ থেকে গাজীপুরের অধিকাংশ কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। কারখানা বন্ধ থাকলেও আজ সকালে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকেরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। এতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ আছে।

শিল্প পুলিশ ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৩ অক্টোবর থেকে কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক ও তেলিচালা এলাকার কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা বেতন বাড়ানোর দাবিতে অবরোধ শুরু করেন। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে শ্রমিক বিক্ষোভ গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ীর নাওজোর, ভোগরা, চান্দনা চৌরাস্তাসহ আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। আজ সকাল থেকে শ্রমিকেরা মৌচাক ও তেলিচালা এলাকায় মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ ছাড়া গাজীপুর মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় শ্রমিকদের বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। বিএনপির ডাকা অবরোধের মধ্যে স্বল্প পরিমাণ যানবাহন চলাচল করলেও শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে সকাল সাড়ে আটটা থেকে সেগুলোর চলাচল বন্ধ আছে। বেতন বাড়ানোর দাবিতে শ্রমিকেরা নানা ধরনের স্লোগান দিচ্ছেন।

আরও পড়ুন

আজ সকালে কোনাবাড়ী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার সবচেয়ে বড় কারখানা তুসুকা গ্রুপের প্রধান ফটকে বড় একটি ব্যানার ঝুলছে। এতে লেখা আছে, ‘অনিবার্য কারণে কারখানার সব কার্যক্রম আগামী ২ অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে’, একই এলাকার এম এম নেটওয়ার্ক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে শুধু মঙ্গলবারের জন্য। এ ছাড়া আরও বেশ কয়েকটি কারখানার সামনে কারখানা বন্ধের নোটিশ দেখা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারখানার এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, শ্রমিক আন্দোলনের কারণে কারখানা সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই খুলে দেওয়া হবে।

ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় সতর্ক অবস্থানে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার সকাল নয়টার দিকে
ছবি: প্রথম আলো

গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী এলাকার তুসুকা গ্রুপের নিটিং সেকশনের শ্রমিক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বেতন দেওয়া হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। এই টাকায় আমাদের সংসার চলছে না। ঘরভাড়া দেওয়ার পর যা থাকে, তা দিয়ে কোনোভাবে বেঁচে আছি। এখন আমাদের দাবি, সর্বনিম্ন বেতন ২৩ হাজার টাকা দিতে হবে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলতে থাকবে।’

আরও পড়ুন

শ্রমিকদের মজুরি বোর্ড নিয়ে সরকার কাজ করছে, তবে এখনো সেটি চূড়ান্ত হয়নি জানিয়ে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক জোটের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আশরাফুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যখন মজুরি চূড়ান্ত করে ঘোষণা দেওয়া হবে, তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিব, সেটি মানব কি মানব না। কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোক শ্রমিকদের উসকানি দিয়ে এটাকে ইস্যু বানিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তুলছে।’

গাজীপুরের বাসন থানার ওসি আবু সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, শ্রমিকেরা বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে মিছিল করছেন। আজকে অধিকাংশ কারখানা বন্ধ থাকায় শ্রমিকদের সংখ্যা কিছুটা কম। তাঁদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।