কোথাও বুকসমান, কোথাও কোমরসমান পানি, জামালপুরে ৩৬৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ

বন্যার কারণে জামালপুরে ৩৬৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ। গত মঙ্গলবার দুপুরে ইসলামপুরের পূর্ব বলিয়াদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণেছবি: প্রথম আলো

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে জামালপুরে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। মাঠে ও শ্রেণিকক্ষে পানি ওঠায় জামালপুর সদরসহ ৭টি উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলিয়ে ৩৬৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ আছে। এর মধ্যে ২৭৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৮৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা। ২ জুলাই থেকে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম স্থবির বলে জেলা মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।

আজ শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ইতিমধ্যে জেলার সাতটি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, বকশীগঞ্জ, মাদারগঞ্জ, মেলান্দহ ও সরিষাবাড়ী উপজেলার ৪০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ২ লাখ ৫০ হাজার ২২৮ মানুষ বন্যায় সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।

আরও পড়ুন

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মাদারগঞ্জে ৮৫টি, ইসলামপুরে ৩৮টি, দেওয়ানগঞ্জে ৮১টি, মেলান্দহে ৩৪টি, সরিষাবাড়ীতে ২৪টি, বকশীগঞ্জে ১৫টি ও সদর উপজেলায় ৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ আছে। অন্যদিকে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানা গেছে, মাদারগঞ্জে ৯টি, ইসলামপুরে ২৯টি, দেওয়ানগঞ্জে ২৫টি, মেলান্দহে ১টি ও সরিষাবাড়ীতে ৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ আছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিনশেড ভবনের চাল ছুঁই ছুঁই পানি। মাঠের মধ্য দিয়ে নৌকা চলাচল করছে। শ্রেণিকক্ষের একপাশ পানির স্রোতে ভেঙেও গেছে। বলিয়াদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আঙিনায় এখনো কোমরসমান পানি। পূর্ব বলিয়াদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে হাঁটুপানি এবং শ্রেণিকক্ষগুলোর মধ্যে পানি ঢুকেছে। ঢেংগারগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে স্রোত বয়ে যাচ্ছিল। একই অবস্থা বলিয়াদহ উচ্চবিদ্যালয়, দক্ষিণ চিনাডুলী দাখিল মাদ্রাসা, বামনা নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়, বামনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুকসমান পানি। বেঞ্চ, চেয়ার, টেবিলসহ বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় আসবাব পানিতে ভাসছে। বিদ্যালয়ের ফাইল ও বইপত্র পানিতে ভিজে গেছে। এ ছাড়া অনেক বিদ্যালয়ের মাঠে কাদা জমেছে।

চিনাডুলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. আশিকুর রহমান বলে, বন্যায় ঘরবাড়িতে যেমন পানি, তেমন স্কুলেও পানি। এক সপ্তাহ ধরে পড়ালেখা করা হয়নি। পানিতে স্কুল ডুবে আছে।

২ জুলাই থেকে ৩৬৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম স্থবির বলে জেলা মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ইসলামপুরের চিনাডুলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

দক্ষিণ চিনাডুলী দাখিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাবিব বলে, পানি নাই, এমন কোনো জায়গায় নাই। ঘরে মধ্যে হাঁটুসমান পানি ছিল। একটু কমছে। ঘরে মাচা করে থাকতে হচ্ছে। স্কুলে আরও বেশি পানি। নৌকা দিয়ে একবার স্কুলের দিকটায় গিয়েছিল সে। সেখানে কক্ষের মধ্যেও হাঁটুপানি দেখেছে। পানি না যাওয়া পর্যন্ত স্কুল বন্ধই থাকবে।

আরও পড়ুন

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন খান প্রথম আলোকে বলেন, সাতটি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ছে। এতে কোনো কোনো বিদ্যালয় বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে, কোনোটির মাঠে হাঁটুপানি, আবার কোনোটির শ্রেণিকক্ষে পানি প্রবেশ করেছে। আর কোনোটি ব্যবহৃত হচ্ছে বন্যায় আক্রান্ত মানুষের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে। ফলে ওই সব বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ আছে। বন্যা–পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করা হবে, যাতে বন্ধ থাকার সময়ের ক্ষতিটাকে কাটিয়ে নিতে পারে।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম মোজাম্মেল হক বলেন, জেলায় ৮৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পানি ঢুকেছে। ফলে ওই সব প্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত পাঠদান শুরু ব্যবস্থা করা হবে।