রাজশাহীতে বিক্ষোভ করে শাহরিয়ারের কুশপুত্তলিকা পোড়ালেন খায়রুজ্জামানের অনুসারীরা
রাজশাহীর বাঘায় আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম হত্যার বিচার এবং সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামানের (লিটন) বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচারের’ প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেলে রাজশাহী নগরে আয়োজিত কর্মসূচি থেকে রাজশাহী-৬ আসনের সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলমের কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়।
যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ রাজশাহী জেলা ও মহানগরের ব্যানারে এই কর্মসূচির আয়োজন করে। আজ বিকেলে নগরের কুমারপাড়া এলাকায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য খায়রুজ্জামানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি নগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এরপর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। সেখানে বক্তাদের কেউ কেউ শাহরিয়ার আলমকে রাজশাহী নগরে ‘অবাঞ্চিত’ ঘোষণা করেন। পরে শাহরিয়ার আলমের কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়।
নগর যুবলীগের সভাপতি মনিরুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশ সঞ্চালনা করেন রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুম মুবিন। এতে উপস্থিত ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আসলাম সরকার, মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ, জেলা যুবলীগের সভাপতি মাহমুদ হাসান ফয়সল, সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়াসমিন আরাফাত, মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতি মাহবুবুল আলম, সাধারণ সম্পাদক আকতার আলী, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আবদুল মমিন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শফিকুজ্জামান, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি নুর মোহাম্মদ সিয়াম, রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু, সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা হিল গালিব, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শুভ কুমার মণ্ডল, সাধারণ সম্পাদক মো. নাহিদ হাসান প্রমুখ।
নগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ বলেন, ‘আপনি (শাহরিয়ার আলম) আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যকে নিয়ে কথা বলেছেন। খায়রুজ্জামান লিটন ভাইকে নিয়ে আরেকবার মিথ্যাচার, বাজে কথা বললে আপনাকে রাজশাহীতে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হবে। একটা লাশের সামনে রাজনীতি করেন আপনি। আমার প্রশ্ন, আপনি কেন বাবলু ভাইকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে গেলেন না। আপনি হেলিকপ্টারে নিয়ে যেতেন। আপনি নিলেন না কেন।’
জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, আশরাফুল ইসলামের হত্যা নিয়ে এক ন্যক্কারজনক রাজনীতি শুরু হয়েছে। সেই রাজনীতির গডফাদার শাহরিয়ার আলম। তিনি কিন্তু হাসপাতালে বাবুল (আশরাফুল) ভাইকে দেখতে আসেননি। চিকিৎসার খোঁজখবর নেননি। কিন্তু খায়রুজ্জামান লিটন সব সময়ই খোঁজ নিয়েছেন। হাসপাতালে ছুটে গেছেন। মর্গে গিয়েও লাশের খোঁজ নিয়েছেন। লাশ বাসায় পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছেন। অথচ লাশ যখন বাসায় পৌঁছাল, তখন ঘৃণ্য রাজনীতির সূচনা শুরু হয়েছে।
মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘আপনি (শাহরিয়ার) চাঁদাবাজির আখড়া তৈরি করেছেন সাব–রেজিস্ট্রি অফিসে। ৪০ হাজার টাকা কাঠা জমিতে ১০ হাজার টাকা আপনাকে চাঁদা দিতে হয়। সরকারি ফি’এর বাইরে ৪ কাঠা জমির চাঁদা দিতে হয় ৪০ হাজার টাকা আপনার পেটুয়া বাহিনীকে। এটাই সংঘর্ষের সূত্র। এই মুহুরিদের কমিটি আপনি ঘরে বসে করে দেন। চার বছরে চারটি কমিটি দিয়েছেন। এখানে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কমিটি ভোটের মাধ্যমে হতো। যে বেশি চাঁদা তুলে দেন, আপনি তাঁকে কমিটিতে আনেন। এভাবে চার বছর ধরে চালাচ্ছেন। এটা আপনি কেন বলেন না। আপনাকে ছেড়ে দেওয়া হবে না। এই হত্যার বিচার চাই।’
বক্তব্যে মহানগর ছাত্রলীগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের নেতারা শাহরিয়ার আলমকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেন।
দলিল লেখক সমিতির কমিটি নিয়ে বিরোধের জেরে ২২ জুন বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ৫০ নেতা-কর্মী আহত হন। সংঘর্ষের একপর্যায়ে গুরুতর আহত অবস্থায় উপজেলা চত্বরের ভেতর থেকে আশরাফুল ইসলামকে উদ্ধার করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বুধবার বিকেল মারা যান আশরাফুল। ওই সংঘর্ষের পরদিন দলিল লেখক সমিতির সভাপতি শাহিনুর রহমান বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। পরে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজশাহী আদালতে আরেকটি মামলা করেন অন্যপক্ষ।
আশরাফুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের ‘মদদদাতা’ হিসেবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামানের (লিটন) বিরুদ্ধে মামলা করার ঘোষণা দিয়েছেন রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলম। যদিও খায়রুজ্জামান অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা শাহরিয়ার আলমকেই দায়ী করেছেন।