বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ

দ্বিতীয় দফায় মঙ্গলবার বিকেলে সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ফটকে
ছবি: সোয়েল রানা

বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে তিন দফায় সড়ক অবরোধ করেছে। সর্বশেষ আজ মঙ্গলবার রাত পৌনে আটটায় শিক্ষার্থীরা তৃতীয় দফায় সড়ক অবরোধ করে।

এক বিচারকের বিরুদ্ধে মেয়ের সহপাঠীর মাকে প্রকাশ্যে মাফ চাইতে বাধ্য করার অভিযোগে এ আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় বিদ্যালয়ে এসে ওই বিচারকের ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে অনড় রয়েছে তারা।

শিক্ষার্থীরা আন্দোলন অব্যাহত রাখায় আজ রাত পৌনে আটটায় বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম ঘটনাস্থলে আসেন। এ সময় জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের বলেন, তিনি শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেছেন। এরপর ওই নারী বিচারককে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ঘটনাস্থলে আসতে বলেছেন।

এর আগে রাত পৌনে আটটা পর্যন্ত দুই ঘণ্টাব্যাপী ওই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিদ্যালয়টির মিলনায়তনে বৈঠক করেন বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নিলুফা ইয়াসমিন। সেখানে তাদের অনেক অভিভাবকও উপস্থিত ছিলেন।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে, আজ বেলা সাড়ে ১১টায় বিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগে মামলা করার হুমকি দেন বগুড়া জেলা জজ আদালতের ওই নারী বিচারক। এর একপর্যায়ে এক নারী অভিভাবককে মাফ চাইতে বাধ্য করেন তিনি। এ ঘটনায় বেলা আড়াইটার দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রথমে বগুড়া শহরের সার্কিট হাউসের সামনে নওয়াব সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। প্রায় ১৫ মিনিট পর পুলিশ এসে তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। এরপর তারা বিদ্যালয়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় তারা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ তোলে।

দীর্ঘ সময়েও শিক্ষার্থীদের দাবি আদায় না হওয়ায় বিকেল চারটার দিকে আবারও তারা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। এর ঘণ্টাখানেক পর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নিলুফা ইয়াসমিন শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিদ্যালয়ের মিলনায়তনে বৈঠকে বসেন। দুই ঘণ্টা ধরে চলা বৈঠকে শিক্ষার্থীরা দাবি তোলে, ওই বিচারককে বিদ্যালয়ে এসে ভুক্তভোগী অভিভাবকের কাছে মাফ চাইতে হবে।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ওই নারী বিচারকের মেয়ে এ বছর বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষকদের নির্দেশে প্রতিদিন পালা করে শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেয় শিক্ষার্থীরা। কিন্তু মা বিচারক হওয়ায় ওই শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেবে না বলে জানায়। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আপত্তি জানায়। এটা নিয়ে ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি স্ট্যাটাস দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই নারী বিচারক আজ বিদ্যালয়ে এসে মাফ চাওয়ানোর ঘটনা ঘটান।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, তিনি দিনভর ঘটে যাওয়া ঘটনা শিক্ষার্থীদের মুখ থেকে শুনছেন।

সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন বলেন, ওই বিচারকের মেয়ে তিন মাস আগে এখানে ভর্তি হয়। এর পর থেকে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে অন্যদের দূরত্ব তৈরি হয়। ওই শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দিলে অন্যরা উপহাস করে।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান শিক্ষক বলেন, বেলা সাড়ে ১১টায় তাঁর সামনেই ঘটনাটি ঘটেছে। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার কারণে তিনি (নারী বিচারক) আইসিটি আইনে মামলা করার কথা বলেছেন। সেই ভয়ে একজন ছাত্রী ও তার অভিভাবক বিচারকের কাছে মাফ চেয়েছে।