লাকসামে যুবদলের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের উত্তেজনা
কুমিল্লার লাকসামে যুবদলের কমিটি গঠন ও প্রতিনিধি সভাকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুটি পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত লাকসাম সদরের দৌলতগঞ্জ বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
দলীয় সূত্র জানায়, লাকসামে বিএনপির রাজনীতি দুই ভাগে বিভক্ত। এক পক্ষের নেতৃত্বে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কুমিল্লা বিভাগীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম আনোয়ার উল আজিম। আর অন্য পক্ষের নেতৃত্বে আছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক মো. আবুল কালাম। দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠন নিয়ে এ দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছে।
দুই পক্ষের অনুসারী যুবদলের অন্তত পাঁচ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবদলের একটি সাংগঠনিক দলের লাকসামে দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পৃথকভাবে প্রতিনিধি সভা করার কথা। প্রথমে জেলা যুবদলের সাংগঠনিক দলটি পৃথক সভায় উপস্থিত থাকার আশ্বাস দিলেও পরে আনোয়ার উল আজিম পক্ষের নেতা-কর্মীদের সভায় উপস্থিত থাকতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। এরপর দুপুরে জেলা যুবদলের সাংগঠনিক দল লাকসাম সদরের উত্তর বাজার এলাকায় আবুল কালাম পক্ষের কার্যালয়ে এলে যুবদলের প্রতিনিধি সভা শুরু হয়। ওই সভা শুরুর আগে থেকেই দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা মুখোমুখি অবস্থান নেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিলে দৌলতগঞ্জ বাজারে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় উভয় গ্রুপে নেতা–কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় অনেকের হাতে চায়নিজ কুড়াল, চাপাতিসহ দেশি অস্ত্র দেখা গেছে। একপর্যায়ে আনোয়ার উল আজিমের অনুসারীরা দৌলতগঞ্জ বাজারে মিছিলও বের করেন। মিছিলটি দৌলতগঞ্জ হয়ে উত্তর বাজার প্রদক্ষিণকালে দুই পক্ষের মধ্যে আবার উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ সময় উত্তর বাজার কালামের দলীয় কার্যালয়ের কাছে এবং মেইন রোড চত্বরে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে বাজারের ব্যবসায়ী ও পথচারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে নেতা–কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
আবুল কালাম পক্ষের উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান জানান, ‘আমাদের কার্যালয়ে যুবদলের প্রতিনিধি সভা চলাকালে অন্য গ্রুপ মিছিল বের করে। এ সময় উত্তেজনা দেখা দেয়। আমরা আমাদের গ্রুপের কর্মী, সমর্থকদের সংঘাত পরিহার করতে অনুরোধ করলে তারা ফিরে আসে। কারণ, আমরা কোনো সহিংসতা চাইনি।’
এ বিষয়ে আনোয়ার উল আজিম পক্ষের উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিশ্বতম সাহা বলেন, ‘যুবদলের কমিটি নিয়ে জেলা যুবদলের একটি সমন্বয়ক প্রতিনিধিদল লাকসাম আসে। উভয় গ্রুপের সঙ্গে প্রথমে বসার কথা থাকলেও তারা একপর্যায়ে আমাদের নিষেধ করে দেয়। এতে উত্তেজিত হয়ে যুবদলের নেতা-কর্মীরা মিছিল বের করে। পরে আমাদের লোকজনকে শান্ত করে আমরা নিয়ে আসি। আমরাও চাইনি কোনো সহিংসতা হোক।’
এ বিষয়ে লাকসাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. ফারুক হোসেন জানান, উত্তেজনার খবর পেয়ে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে ছিল। শেষ পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।