ব্যাংক হিসাব হ্যাক করে টাকা সরানোর ঘটনায় ১০ বছরের কারাদণ্ড
ব্যাংক হিসাব হ্যাক করে টাকা সরিয়ে নেওয়ার মামলায় এক ব্যক্তিকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার সকালে রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক জিয়াউর রহমান এ রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত রাব্বী আহম্মেদের বাড়ি নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চাচকৈড় পুরানপাড়া গ্রামে। রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন।
এ মামলার বাদী ল্যান্স করপোরাল শহিদুল ইসলাম। তাঁর ট্রাস্ট ব্যাংকের হিসাব থেকে টাকা সরিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে ২০২০ সালের ১৪ মে। তখন তিনি সিরাজগঞ্জের র্যাব-১২–তে কর্মরত ছিলেন। শহিদুল ইসলামের বাড়ি নওগাঁর পত্মীতলা উপজেলার শিতল গ্রামে।
আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ইসমত আরা জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দুটি ধারায় আসামিকে পাঁচ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা করে জরিমানা করেছেন বিচারক। জরিমানার অর্থ অনাদায়ে আরও এক বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। সাজা একটির পর অন্যটি কার্যকর হবে। অর্থাৎ আসামির মোট ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা হয়েছে।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ সূত্রে জানা যায়, ল্যান্স করপোরাল শহিদুল ইসলাম ২০২০ সালের ১৪ মে ব্যাংকের দুটি খুদে বার্তার মাধ্যমে জানতে পারেন তাঁর হিসাব (ব্যাংক অ্যাকাউন্ট) থেকে ৫০ হাজার ও ১০ হাজার টাকা অন্য দুটি হিসাবে ট্রান্সফার করা হয়েছে। এ ঘটনায় শহিদুল ইসলাম ১৬ মে সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এ ছাড়া তিনি র্যাব-১২–এর অধিনায়কের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। এরপর অনুসন্ধানে নামে র্যাব।
ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, যে দুটি ব্যাংক হিসাবে টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, সেই হিসাব দুটি পরিচালনা করেন কুষ্টিয়ার খোকশাবাড়ির রান্নু আহম্মেদ নামের এক ব্যক্তি। র্যাব রান্নুর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারে, তিনি অনলাইনে ডলার কেনাবেচা করেন। হোয়াটসঅ্যাপে এক ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে ডলার কিনতে চান; আর তাঁকে ডলারের মূল্য হিসাবে টাকা দিতে চান ব্যাংক হিসাবে। রান্নু ওই ব্যক্তিকে তাঁর ব্যাংক হিসাব নম্বর দিলে তিনি ৬০ হাজার টাকা দিয়েছেন। এরপর মুঠোফোন নম্বরের সূত্র ধরে র্যাব রাব্বী আহম্মেদকে শনাক্ত করে র্যাব।
২০২০ সালের ১০ জুন নাটোরের গুরুদাসপুরে অভিযান চালিয়ে র্যাব-১২–এর একটি দল রাব্বীকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে রাব্বী জানান, তথ্যপ্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব হ্যাক করে এভাবে টাকা সরিয়ে নেন। তাঁর নামে সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন শহিদুল ইসলাম।
আইনজীবী ইসমত আরা জানান, গ্রেপ্তারের পর বেশ কিছু দিন কারাগারে ছিলেন রাব্বী আহম্মেদ। পরে জামিনে মুক্তি পান। রাব্বী আহম্মেদ এখন পলাতক। রায় ঘোষণার দিনও রাব্বী আদালতে হাজির হননি। তাঁর আইনজীবী আদালতের কাছে সময় প্রার্থনা করেছিলেন। তবে আদালত এ আবেদন নামঞ্জুর করে রায় ঘোষণা করেছেন। রাব্বীকে গ্রেপ্তার কিংবা আত্মসমর্পণের পর সাজা কার্যকর করা হবে বলে আদালত রায়ে উল্লেখ করেছেন।