নাবিল ও শাহীনের অনুসারী শ্রমিক লীগের পাল্টাপাল্টি সম্মেলন, যশোর শহরে উত্তেজনা

যশোর জেলার মানচিত্র

ছয় বছর পর আজ শনিবার বিকেলে যশোর জেলা শ্রমিক লীগের পাল্টাপাল্টি সম্মেলন হতে যাচ্ছে। শ্রমিক লীগের দুই পক্ষ একই সময়ে দুই জায়গায় পৃথক সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার দুই পক্ষের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন। এ কারণে সম্মেলন ঘিরে শহরে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

আজ বেলা তিনটায় শাহীন চাকলাদারের সমর্থিত পক্ষ জেলা পরিষদ মিলনায়তনে (বিডি হল) ও কাজী নাবিল আহমেদের পক্ষ শহরের পৌর কমিউনিটি সেন্টারে পাল্টা সম্মেলনের আয়োজন করেছে। দুটি স্থানের দূরত্ব মাত্র ২০০ মিটার। দুটি সম্মেলনেই সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত থাকবেন। শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দুই শীর্ষ নেতার অনুসারীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সম্মেলনে প্রবেশ করবে। এতে পথে পথে সংঘাতের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসাইন বলেন, ‘একই সময়ে পাশাপাশি দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি সম্মেলন, এটা রাজনৈতিক বিষয়। তবে সম্মেলন ঘিরে যাতে আইনশৃঙ্খলার অবনতি বা নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়, সেই প্রস্তুতি আমাদের আছে।’

নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৭ জুলাই শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ১৩ জুলাই সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের পক্ষের নেতা-কর্মীরা এই সম্মেলনকে স্বাগত জানিয়ে প্রচারণা শুরু করেন। শহরের বিভিন্ন স্থানে ফেস্টুন ও ব্যানার টাঙিয়ে পদপ্রত্যাশীরা জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের ছবিসংবলিত তোরণ নির্মাণও করেছেন।

এদিকে এই সম্মেলন গঠনতন্ত্র পরিপন্থী দাবি করে তা বন্ধের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারী জেলা শ্রমিক লীগের একাংশের নেতারা।

নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যশোর জেলা আওয়ামী লীগ দুটি পক্ষে বিভক্ত। একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। অন্যটি সদর আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। জেলা আওয়ামী লীগের বিভক্তি জেলা শ্রমিক লীগের নেতৃত্বেও বিদ্যমান। এ কারণে যশোর জেলা শ্রমিক লীগে বর্তমানে দুজন সভাপতি আছেন। দুজন দুই পক্ষের। জেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি আজিজুর রহমানের মৃত্যুর পর এ পদ নিয়ে শুরু হয় টানাটানি। সহসভাপতি জবেদ আলী ও সাইফুর রহমানকে দুই পক্ষই ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মনোনীত করেন। জবেদ আলী কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারী ও সাইফুর রহমান শাহীন চাকলাদারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তবে সাধারণ সম্পাদক পদে নাছির উদ্দিন নামে একজনই আছেন। নাছির সংসদ সদস্য কাজী নাবিলের সঙ্গে রাজনীতি করেন। ফলে সম্মেলনকে ঘিরে শ্রমিক লীগের বিভক্তি আরও প্রকট হয়েছে।
আজ বেলা তিনটায় জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক-সমর্থিত পক্ষ সম্মেলন ডেকেছে জেলা পরিষদ মিলনায়তনে। এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি থাকবেন শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কে এম আযম খসরু। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার।

অন্যদিকে কোনো রকম প্রচার-প্রচারণা ছাড়াই গতকাল শুক্রবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন একই সময়ে পৌর কমিউনিটি সেন্টারে জেলা শ্রমিক লীগের পাল্টা সম্মেলনের ডাক দেন। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন যশোর পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হয়দার গনি খান ও উদ্বোধক হিসেবে থাকবেন শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি তোফায়েল আহমেদ। সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদেরও এই সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে বলে আয়োজকেরা জানান।

নাছির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক। সম্মেলনের বিষয়ে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। আমার কাছে কোনো চিঠি আসেনি এবং কেন্দ্রের কোনো নির্দেশনাও আমি পাইনি। জোর করে একটি পক্ষ সম্মেলন করছে। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারস্থ হলে পাল্টা সম্মেলন আয়োজনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তাই করেছি। উত্তেজনার কিছু নেই। আমাদের পক্ষ থেকে কোনো ঝামেলা হবে না, এটুকু বলতে পারি।’

একসঙ্গে সম্মেলন করতে না পারার বিষয়ে শাহীন চাকলাদারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাইফুর রহমান বলেন, ‘তারা (সাধারণ সম্পাদক) যদি আমাদের সঙ্গে না আসে, তাহলে কী করার আছে। কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত চিঠির ভিত্তিতে আমরা সম্মেলন করছি। যারা পাল্টা সম্মেলন করছে, তাদের সঙ্গে তেমন কেউ নেই। কয়েকজনকে নিয়ে পাল্টা সম্মেলন ডেকে পরিস্থিতি ঘোলা করছে তারা।’ তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদক সম্মেলনের চিঠি না পেলে এই সম্মেলনের বিপক্ষে তিনি সংবাদ সম্মেলন করলেন কীভাবে? আমাদের দিক থেকে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

এ বিষয়ে যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সবারই দলীয় শৃঙ্খলা মেনে চলা উচিত। সংগঠনের পাল্টাপাল্টি সম্মেলন হওয়া ঠিক হচ্ছে না। বিদ্যমান পরিস্থিতি শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দেখবে। তবে আমি কোনো পক্ষের সম্মেলনে যোগ দিচ্ছি না।’  

এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, কোনো কোনো জনপ্রতিনিধির ইন্ধন রয়েছে বলে একসঙ্গে সম্মেলন করা যায়নি। পাল্টা যারা সম্মেলন করছে, তাদের সঙ্গে তেমন কেউ নেই। কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ পৌর কমিউনিটি সেন্টারের সম্মেলনে যাবে না। কোনো সংঘাত হবে না।