সিলেটে কুশিয়ারা নদীর বাঁধ ভেঙে আরও অনেক গ্রাম প্লাবিত
সিলেটে বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কয়েকটি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। সিলেটে বৃষ্টি কম হলেও ভারতের বরাক নদের শাখা কুশিয়ারার পানিপ্রবাহ বেড়েছে। জকিগঞ্জ উপজেলায় চারটি স্থানে কুশিয়ারা নদীর বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। আজ শুক্রবার সকাল পর্যন্ত জেলার প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারার সব পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে আজ সকাল ৬টায় পানি বিপৎসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে নদীটির সিলেট পয়েন্টে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হলেও আজ সকালের তথ্য পাওয়া যায়নি। কুশিয়ারা নদীর অমলশিদ পয়েন্টে আজ সকাল ৬টায় পানি বিপৎসীমার ১৪৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। নদীর শেওলা পয়েন্টে পানি ছিল ৪০ সেন্টিমিটার ওপরে। ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ১০৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। অন্যদিকে নদীর শেরপুর পয়েন্টে পানি আজ সকাল ৬টায় ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে জেলার অন্য নদ-নদীর পানি গতকাল সন্ধ্যার তুলনায় আজ কিছুটা কমেছে।
গত বুধবার সকাল থেকে জকিগঞ্জ পৌর এলাকার নরসিংপুরসহ কুশিয়ারা নদীর বিভিন্ন এলাকার বাঁধ ভেঙে ৮৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া বিয়ানীবাজার উপজেলায়ও কুশিয়ারা নদীর বাঁধ ভেঙে ও পানি উপচে প্লাবিত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। এ ছাড়া একই নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জেও উপচে পড়ে চারটি গ্রাম ও ফেঞ্চুগঞ্জ বাজার প্লাবিত হয়েছে।
জকিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবদুল আহাদ বলেন, কুশিয়ারা নদীর কয়েকটি স্থানে বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে হু হু করে পানি প্রবেশ করছে। বাঁধগুলো বাঁচানোর জন্য স্থানীয়রা চেষ্টা করলেও সফল হননি। বুধবার ভোরে নরসিংপুরের বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। এর আগে স্থানীয় বাসিন্দাদের জকিগঞ্জ সরকারি কলেজে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বাঁধ মেরামতের জন্য এরই মধ্যে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পানি না নামলে সেগুলো মেরামত করা সম্ভব নয়।পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ
এদিকে বিয়ানীবাজার উপজেলায় দেউলগ্রাম, গোবিন্দশ্রী, আঙ্গুরা মোহাম্মদপুর, আলীনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় কুশিয়ারা নদীর পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করছে।
দুই দিন ধরে বৃষ্টি কমলেও সিলেট নগরের অভ্যন্তরে জলাবদ্ধতা কাটেনি। শহরের অভ্যন্তরেও বেশ কয়েকটি এলাকা পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এর মধ্যে শাহজালাল উপশহর, যতরপুর, মীরাবাজার, তালতলা, জামতলা, মির্জাজাঙ্গাল, মণিপুরি রাজবাড়িসহ বিভিন্ন পাড়া–মহল্লায় এখনো পানিবন্দী বাসিন্দারা।
শাহজালাল উপশহরের ডি ব্লকের বাসিন্দা ফাহাদ মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ঘরের নিচতলায় পানি জমে আছে। সড়কে হাঁটুর ওপরে পানি।
ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারের মুদিদোকানি পাভেল আহমদ বলেন, যে সড়কে যানবাহন চলত, এখন ১০ দিন ধরে সেই সড়কে নৌকা চলছে। নৌকায় মানুষজন বাজার করতে আসছে। বন্যা পরিস্থিতির কারণে বেচাকেনা কম হলেও প্রতিদিন পানির সঙ্গে অনেকটা যুদ্ধ করেই তিনি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালু রেখেছেন।
পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ জানান, বাঁধ মেরামতের জন্য এরই মধ্যে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পানি না নামলে সেগুলো মেরামত করা সম্ভব নয়।
সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের সব উপজেলা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী মানুষের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলায় ৬৫০টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ২০৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজন অবস্থান করছেন। আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও জেলায় বন্যাকবলিত বাসিন্দাদের জন্য ত্রাণসহায়তা অব্যাহত আছে।