কক্সবাজারের টেকনাফে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) আঞ্চলিক কমান্ডার পর্যায়ের দুই দিনব্যাপী সীমান্ত সম্মেলন আজ বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। সম্মেলনে অবৈধ অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ, আন্তসীমান্ত সন্ত্রাস দমন ও দুষ্কৃতকারীদের প্রতিহতকরণ, মাদক চোরাচালান প্রতিরোধ, সীমান্তে গুলিবর্ষণ, আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) স্থাপনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
সীমান্ত সম্মেলনে বাংলাদেশের ১৫ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বিজিবির কক্সবাজার অঞ্চলের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজম-উস-সাকিব। এতে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিরা ছিলেন। অন্যদিকে মিয়ানমারের ১৬ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দেশটির বিজিপি ১ নম্বর অঞ্চলের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল লেথ লিউন।
টেকনাফ সমুদ্রসৈকতের একটি হোটেলের সম্মেলনকক্ষে গতকাল বুধবার সকাল ১০টায় এ সম্মেলন শুরু হয়। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজম-উস-সাকিব। প্রেস ব্রিফিংয়ে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের প্রধানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। সীমান্ত সম্মেলন নিয়ে তাঁদের প্রশ্ন করার সুযোগ রাখা হয়নি সাংবাদিকদের।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজম-উস-সাকিব বলেন, সম্মেলনে দুই পক্ষের মধ্যে ইয়াবা ও ক্রিস্টালমেথ আইসের চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ, অবৈধ অনুপ্রবেশ, আন্তসীমান্ত সন্ত্রাস দমন, দুষ্কৃতকারীদের প্রতিরোধ, সীমান্তে গুলিবর্ষণসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
পাশাপাশি ভুলবশত বা ঝড়ের কবলে পড়ে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলে যাওয়া বাংলাদেশি লোকজনের ফেরত আনার বিষয়টি সহজীকরণ, উভয় দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে দ্রুত যোগাযোগব্যবস্থা, সীমান্তে যৌথ টহল পরিচালনা, সীমান্ত পিলার পরিদর্শনসহ নানা বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।
‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত চুক্তি ১৯৮০’ অনুযায়ী সীমান্ত সুরক্ষায় এ সম্মেলনকে একটি নিয়মিত বৈঠক উল্লেখ করে বিজিবির কমান্ডার বলেন, দুই দিনের সীমান্ত সম্মেলন অত্যন্ত আন্তরিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত নিরাপত্তা ও সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ-সম্পর্কিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মাধ্যমে সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়ে উভয় দেশের প্রতিনিধিদল সম্মিলিতভাবে কাজ করতে সম্মত হয়েছে। ভবিষ্যতে নিয়মিত বিরতিতে এমন সভা আয়োজন, নিবিড় যোগাযোগের মাধ্যমে পারস্পরিক আস্থা, নির্ভরতা, সহযোগিতার ক্ষেত্র বৃদ্ধির লক্ষ্যে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে।
টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, সম্মেলন শেষে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ হয়ে সাবরাং বাজারঘুরে বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাট দিয়ে রাখাইন রাজ্যে ফিরে গেছেন। বিজিবি জানায়, ২০২২ সালের জুন মাসে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুতে বিজিবি ও বিজিপির মধ্যে আঞ্চলিক কমান্ডার পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।