বাগেরহাটে দুই ওসির বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মীদের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ
বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মীদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ফকিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি রাতের আঁধারে কর্মীদের বাড়িতে গিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও এলাকা ছাড়ার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী শেখ ওয়াহিদুজ্জামান (বাবু)।
দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে শেখ ওয়াহিদুজ্জামান আজ রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের কাছে ই-মেইলের মাধ্যমে লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ডিবির ওসি স্বপন রায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আমাদের রুটিন ওয়ার্কে গেছিলাম। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বহিরাগত যারা আছে, যাতে কোনো অস্ত্রের ব্যবহার, ওয়ারেন্টের আসামি, এ ধরনের রুটিন ওয়ার্কে আমরা ছিলাম। আমরা এবং থানার পুলিশ সবাই। এর বাইরে আমাদের কোনো বক্তব্য নাই।’ এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁদের এলাকায় তাঁরা থাকবেন।
লিখিত অভিযোগে শেখ ওয়াহিদুজ্জামান উল্লেখ করেছেন, গতকাল শনিবার (১৮ মে) গভীর রাতে ফকিরহাট মডেল থানার ওসি আশরাফুল আলম ও জেলা ডিবির ওসি স্বপন রায় তাঁর একনিষ্ঠ তিন কর্মীর বাড়িতে গিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। দুই পুলিশ কর্মকর্তা প্রতিপক্ষ প্রার্থীর আনারস প্রতীকের পক্ষে কাজ করার অথবা বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন। এতে কর্মীদের পরিবারের সদস্য এবং নিজ নিজ এলাকার সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও নিরপেক্ষ ভোট প্রদানে প্রভাব পড়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, উপজেলার পিলজংগ (বেড়বাড়ী) গ্রামের এস এম খলিলুর রহমান, লখপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য হারুন-অর-রশিদ ও একই ইউনিয়নের শেখ রাহিম আহম্মদের বাড়িতে গিয়ে এমন হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন শেখ ওয়াহিদুজ্জামান।
লখপুর ইউপির সদস্য হারুন-অর-রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। আমার বাড়ি থানা–পুলিশ থেকে শুরু করে সবাই চেনে। তারপরও গতকাল (শনিবার) গভীর রাতে থানার পুলিশ ও ডিবি মিলে আশাপাশে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে অন্যের বাড়িতে গিয়ে আমার বাড়ি কোথায়, এসব খোঁজ নিছে। এভাবে রাত পৌনে তিনটার দিকে তারা আমার বাড়িতে আসে। বাড়িতে আমার ছোট বাচ্চা-স্ত্রীসহ সবাই ভয় পেয়ে গেছে।’
এ ঘটনায় এলাকার সবাই আতঙ্কিত উল্লেখ করে হারুন–অর–রশিদ বলেন, ‘তারা বলে (পুলিশ কর্মকর্তারা), ‘‘তোমরা নির্বাচন করতেছ, এ নির্বাচন এভাবে করা যাবে না। আনারসের (বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি স্বপন কুমার দাস) পক্ষে করতে হবে। তোমরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতেছ’’ বলে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখায়। আমাদের আরও কর্মীদের বাড়িও এভাবে তারা গেছিল।’
এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক অরবিন্দ বিশ্বাসের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তিনি একটি সভায় আছে বলে জানান।
নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজিয়া সিদ্দিকা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তো আসলে আমি ব্যবস্থা নিতে পারব না। আমার কাছে যে অভিযোগ আসছে তা আমি রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর পাঠিয়ে দিয়েছি। এরপর আমার কাছে কোনো নির্দেশনা এলে সে অনুযায়ী আমি কাজ করব।’