সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হবেন কি না, তা কয়েক দিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। গতকাল রোববার প্রথম আলোকে তিনি এ কথা বলেন।
আরিফুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার দল বিএনপি যৌক্তিক কারণেই বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। আমি এটাকে সমর্থন করি। তবে যেহেতু এই নগরের ভোটাররা আমাকে ভোট দিয়ে টানা দুবার নির্বাচিত করেছেন, তাই তাঁদের মতামতও দলের মতোই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন নিয়ে এরই মধ্যে ভোটার, শুভানুধ্যায়ী ও সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলেছি। সবার মতামত জানতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে। এরপরই প্রার্থিতা নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করব।’
বিএনপির মনোনয়নে টানা দ্বিতীয় দফায় মেয়র নির্বাচিত হন আরিফুল হক চৌধুরী। বর্তমানে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি এবং সিলেট জেলা কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন। এ ছাড়া তিনি বিএনপির সিলেট মহানগরের সভাপতি ও জেলার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন।
নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় দলীয়ভাবে আরিফুল হক চৌধুরীর প্রার্থিতা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ২১ জুন ইভিএমে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে। ২৩ মে পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২৫ মে আর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১ জুন। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ চলবে।
বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে ২ এপ্রিল যুক্তরাজ্যে যান আরিফুল হক চৌধুরী। সেখানে তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে ১৬ এপ্রিল আরিফুল সিলেটে ফেরেন। প্রার্থিতা নিয়ে তখন আরিফুল গণমাধ্যমে বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকে তাঁর কাছ থেকে নির্বাচন নিয়ে ‘সংকেত’ পেয়েছেন। তবে সেটি ইতিবাচক না নেতিবাচক, তা তিনি পরিষ্কার করেননি। ঈদের পর বিষয়টি খোলাসা করবেন বলেও আরিফুল তখন জানিয়েছিলেন।
পোস্টার-তোরণে সয়লাব
গতকাল সরেজমিন দেখা গেছে, নগরবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের পোস্টার ও তোরণে নগরের ৪২টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকা সয়লাব হয়ে গেছে। বিএনপিদলীয় বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী এবং জাতীয় পার্টির দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী নজরুল ইসলামের সমর্থনে তোরণের আধিক্য দেখা গেছে। এর বাইরে ইসলামী ঐক্যজোট বাংলাদেশের মনোনীত মেয়র প্রার্থী মাহমুদুল হাসানের সমর্থনেও নগরে পোস্টার সাঁটানো হয়েছে।
একাধিক ভোটার বলেন, সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ঈদ শুভেচ্ছাসংবলিত পোস্টার, ব্যানার, বিলবোর্ড সাঁটানোর পাশাপাশি তোরণ তৈরি করে প্রচার-প্রচারণা চালানোয় নগরজুড়ে নির্বাচনী আমেজ তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজেদের বাসা এবং বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। আড্ডা-আলোচনায় নির্বাচনী আলাপে মেতে উঠেছেন ভোটারেরা।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে নির্বাচনী পরামর্শ নিয়েছি। বিভিন্ন ওয়ার্ডের সামাজিক, ধর্মীয়সহ নানা অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছি। ভোটারেরা আমাকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছেন। আশা করি, নগরবাসী আমাকে যথাযথ মূল্যায়ন করবেন। নির্বাচিত হলে সিলেটকে একটি স্মার্ট নগরে পরিণত করতে কাজ করব।’