আচরণবিধি লঙ্ঘন করে শামীম ওসমানের পক্ষে নৌকা প্রতীক নিয়ে মিছিল
আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের পক্ষে নৌকা প্রতীক নিয়ে মিছিল করেছেন স্থানীয় এক যুবলীগ নেতা। আজ শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে শহরের তল্লা এলাকায় মিছিলটি বের করা হয়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ হবে। এর আগে ভোটের প্রচার চালানোর সুযোগ নেই। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালার ১২ ধারায় বলা আছে, কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা তার মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাঁর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি ভোট গ্রহণের জন্য নির্ধারিত তিন সপ্তাহ সময়ের আগে কোনো ধরনের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করতে পারবেন না।
শামীম ওসমানের সমর্থকদের মিছিলের কারণে শহরের তল্লা এলাকায় ওই সড়কে যানবাহন ও পথচারীদের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালার ৬ (ঘ) ধারায় বলা আছে, কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা তাদের মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাঁদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি জনগণের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে সড়কে এমন কোনো জনসভা ও পথসভা করতে পারবেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফতুল্লা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও দলের সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে মিছিলটি বের করা হয়। এর নেতৃত্ব দেন স্থানীয় যুবলীগ নেতা জানে আলম ওরফে বিপ্লব। তিনি শামীম ওসমানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, মিছিলে শতাধিক নেতা–কর্মী অংশগ্রহণ করেন। তাঁদের হাতে ছিল জাতীয় পতাকা, নৌকা প্রতীকের ফেস্টুন ও বাদ্যযন্ত্র। তাঁরা শামীম ওসমানের পক্ষে নৌকায় ভোট চেয়ে তল্লার বিভিন্ন পাড়া–মহল্লায় মিছিল ও পথসভা করেন। উন্নয়নের মার্কা নৌকা, জনগণের মার্কা নৌকা ইত্যাদি স্লোগান দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জানে আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘থানা আওয়ামী লীগের নেতারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মিছিল করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। বিজয়ের মাস এবং নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতারা দলের প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ আছি। এ কারণে নৌকা প্রতীক নিয়ে এলাকায় মিছিল করেছি।’ দলীয় প্রতীক নিয়ে মিছিল করা আচরণবিধি লঙ্ঘন বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে যুবলীগ নেতা জানে আলম বলেন, ‘আমরা তো কারও কাছে ভোট চাই নাই। আমরা দল করি, প্রতীক নিয়ে মিছিল করেছি।’
এ বিষয়ে শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী প্রথম আলোকে জানান, শামীম ওসমানকে আবার মনোনয়ন দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এলাকায় মিছিল করার জন্য বলা হয়েছে। আচরণবিধির লঙ্ঘন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা তো কারও কাছে ভোট চাইনি।’
দলীয় প্রতীক নিয়ে শামীম ওসমানের অনুসারীদের আনন্দমিছিলটি আচরণবিধির লঙ্ঘন বলে স্বীকার করেছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কাজী মো. ইস্তাফিজুল হক আকন্দ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘন করে যাঁরা প্রতীক নিয়ে মিছিল করেছেন, তাঁদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রাথমিকভাবে তাঁদের সতর্ক করা হবে। পরবর্তীতে সময়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গত বুধবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। আওয়ামী লীগের হয়ে তিনি আসনটিতে ১৯৯৬, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।