দৌলতদিয়া যৌনপল্লির সুবিধাবঞ্চিত নারীরা পেলেন কোরবানির মাংস

উত্তরণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া যৌনপল্লির অসহায় সুবিধাবঞ্চিত প্রায় দুই হাজার নারীর মধ্যে এক কেজি করে কোরবানির মাংস বিতরণ। গতকাল সন্ধ্যায় দৌলতদিয়া সোহরাব মণ্ডলপাড়ায় অবস্থিত উত্তরণ শিশু বিদ্যানিকেতন মাঠ চত্বরে
ছবি: প্রথম আলো

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ার পূর্ব পাড়ায় অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ যৌনপল্লির দুই হাজার নারীর মধ্যে কোরবানির মাংস বিতরণ করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমানের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান উত্তরণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এ মাংস বিতরণ করা হয়।

দৌলতদিয়া সোহরাব মণ্ডলপাড়ায় অবস্থিত উত্তরণ শিশু বিদ্যানিকেতন মাঠ চত্বরে ঈদের দিন বিকেল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এ মাংস বিতরণ।

পূর্বপাড়া যৌনপল্লির বাসিন্দারা বলেন, দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের বসবাস। এখানে প্রায় দেড় হাজার নিয়মিত যৌনকর্মীসহ রয়েছেন বয়স্ক মাসি, ঝিয়ের কাজ করেন এমন মানুষসহ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। প্রতিদিন তাঁদের দারিদ্র্যের সঙ্গে মোকাবিলা করে চলতে হয়। করোনাকালে তাঁদের পাশে এসে দাঁড়ায় সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান উত্তরণ ফাউন্ডেশন। পুলিশের বর্তমান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার (ডিআইজি), বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) হাবিবুর রহমান এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। সমাজের অবহেলিত মানুষ, বেদে সম্প্রদায়, তৃতীয় লিঙ্গ হিজরাসহ যৌনকর্মীদের পাশে এগিয়ে আসে উত্তরণ ফাউন্ডেশন।

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ২০১৯ সালে পূর্বপাড়া যৌনপল্লির বাসিন্দাদের মধ্যে প্রথমবারের মতো কোরবানির মাংস বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। কোরবানির মাংস দিয়ে এখানকার অবহেলিত নারীরা অন্তত এক বেলা ভালো খাবার পাক, সেই চেষ্টা অব্যাহত রাখে তারা। তারই ধারাবাহিকতায় ঈদের দিন গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দৌলতদিয়া যৌনপল্লি এলাকার সুবিধাবঞ্চিত ও অসহায় দুই হাজার নারীর মধ্যে প্রত্যেককে এক কেজি সমপরিমাণ কোরবানির গরুর মাংস তুলে দেওয়া হয়।

এ সময় দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) স্থানীয় ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল জলিল ফকির, উত্তরণ ফাউন্ডেশনের সদস্য এবং যৌনকর্মীদের নিয়ে গঠিত অসহায় নারী ঐক্য সংগঠনের সভানেত্রী ঝুমুর বেগম, গোয়ালন্দ বাজারের বিশিষ্ট মৎস্য ব্যবসায়ী আজাদ মোল্যাসহ নারীনেত্রীরা উপস্থিত ছিলেন।

অসহায় নারী ঐক্য সংগঠনের সভানেত্রী ঝুমুর বেগম বলেন, ‘করোনার সময় থেকে যৌনপল্লির বাসিন্দারা ভালো নেই। পদ্মা সেতু চালুর পর মানুষের আসা-যাওয়া এখানে অনেক কমে যাওয়ায় এখানকার বাসিন্দারা আরও অভাবে পড়েন। বছরে পবিত্র দুই ঈদের সময় এসব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায় পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান স্যারের উত্তরণ ফাউন্ডেশন। ২০১৯ সাল থেকে এই পূর্ব পাড়ার সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য কোরবানির মাংস বিতরণ করছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবারও দুই হাজার অসহায় নারীর মধ্যে কোরবানির মাংস বিতরণ করা হয়। ঈদের দিন মাংস পেয়ে এখানকার বাসিন্দারা খুবই খুশি ও আনন্দিত। আমরাও কৃতজ্ঞ হাবিবুর রহমান স্যার ও তাঁর উত্তরণ ফাউন্ডেশনের কাছে।’