মুন্সিগঞ্জ থেকে ঢাকায় ঢুকছে না বাস–লঞ্চ–লেগুনা, যাত্রীদের ভোগান্তি
ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে মুন্সিগঞ্জ থেকে লঞ্চ, যাত্রীবাহী বাস ও লেগুনা চলাচল বন্ধ আছে। আজ শনিবার সকাল থেকে সড়ক ও নৌপথে গণপরিহন বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন ঢাকামুখী যাত্রীরা। তবে লঞ্চ কর্তৃপক্ষের দাবি, যাত্রী না থাকায় লঞ্চ বন্ধ রাখা হয়েছে। অন্যদিকে পরিবহন মালিক সমিতি বলছে, ধর্মঘটের কারণে বাস চলছে না।
আজ সকাল আটটার দিকে মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা যায়, পন্টুনে সারি বেঁধে লঞ্চগুলো নোঙর করে রাখা। পন্টুন ও গ্যাংওয়েতে ১৫-২০ জন পুলিশ সদস্য বসে আছেন। লঞ্চ চলাচল বন্ধের বিষয়টি না জানায় অনেকেই ঘাটে এসে ফিরে যাচ্ছেন।
মুন্সিগঞ্জ ও মিরকাদিম লঞ্চঘাটের ইজারাদার দিল মোহাম্মদ বলেন, সকাল থেকে দক্ষিণাঞ্চলের কোনো লঞ্চ আসেনি। এ জন্য মুন্সিগঞ্জ থেকে যাত্রীরা ঢাকায় যেতে পারেননি। আবার নারায়ণগঞ্জ নৌপথে তাঁদের যাত্রী নেই। লঞ্চ চালালেই প্রতি ট্রিপে লোকসান গুনতে হয়। এ জন্য নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জের নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ আছে। যাত্রী হলে আবার লঞ্চ চলাচল শুরু করা হবে।
সড়কপথে প্রতিদিন মুন্সিগঞ্জ শহর থেকে মুক্তারপুর হয়ে ঢাকায় যাতায়াত করে দিঘীরপাড় পরিবহনের ১৭টি বাস। তবে গত বৃহস্পতিবার থেকে এই পরিবহনের বাস চলাচল বন্ধ আছে। আজ সকালেও হাটলক্ষীগঞ্জ এলাকায় দিঘীরপাড় পরিবহনের ১০ থেকে ১২টি বাস দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
রাজনৈতিক সমাবেশকে কেন্দ্র করে গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়ায় অনেক যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মানিকপুর এলাকার বাসিন্দা মঞ্জিল হোসেন তাঁর অসুস্থ স্ত্রীকে চিকিৎসক দেখাতে ঢাকায় যাওয়ার জন্য মুক্তারপুর এসে দেখেন, বাস বন্ধ। মঞ্জিল হোসেন আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘বিএনপির একটি সমাবেশকে কেন্দ্র করে বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা যাঁরা বিভিন্ন প্রয়োজনে ঢাকায় যাব, তাঁদের ভোগান্তি বলে বোঝানো যাবে না। বাস না থাকায় ভেঙে-ভেঙে ঢাকায় যেতে হবে। এতে সময়, খরচ ও ভোগান্তি অনেক বেশি হবে।’
বাস বন্ধের বিষয়ে দিঘীরপাড় পরিবহনের চালকের সহকারী সঞ্জয় চন্দ্র দে বলেন, তিন দিন ধরে মালিক সমিতি বাস বন্ধ রেখেছে। তবে কী কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে, সেটা তিনি জানেন না।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক চালক বলেন, ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশে যেন মানুষ যেতে না পারেন, এ জন্য বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তিন দিন ধরে বাস বন্ধ থাকায় তাঁরা কোনো আয় করতে পারছেন না। এতে সংসার চালাতে তাঁরা হিমশিম খাচ্ছেন।
জানতে চাইলে দিঘীরপাড় বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নূর হোসেন ব্যাপারী প্রথম আলোকে জানান, তিন দিন ধরে তাঁদের বাস ধর্মঘট চলছে। এ জন্য তাঁরা বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন। কী কারণে ধর্মঘট চলছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। এটা ঢাকা থেকে নির্ধারিত হয়েছে।
মুন্সিগঞ্জ ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার যাত্রীরা সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও লেগুনাতে করেও ঢাকায় যাতায়াত করেন। তবে আজ সকাল থেকে লেগুনা চলাচলও বন্ধ রেখেছেন চালকেরা। হাতেগোনা দু–একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলতে দেখা গেছে।
লেগুনা চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মালিক সমিতির নির্দেশেই তাঁরা লেগুনা চলাচল বন্ধ রেখেছেন। আবার নির্দেশনা পেলে চলাচল শুরু হবে। তবে কী কারণে মালিকপক্ষ লেগুনা বন্ধ করল, সে বিষয়ে চালকেরা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
এদিকে আজ সকাল থেকে মুক্তারপুর বাসস্ট্যান্ডসহ শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। জানতে চাইলে মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ তারিকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে দুষ্কৃতকারীরা যেন বিস্ফোরক দ্রব্য বহন করতে না পারে, সে জন্য পুলিশ তৎপর আছে। এ ছাড়া বিজয় দিবস ও থার্টি ফার্স্ট নাইটকে সামনে রেখে ঢাকার প্রবেশদ্বার মুন্সিগঞ্জের সড়ক ও নৌপথের ৮৪টি পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এসব জায়গায় সাধারণ মানুষ যেন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করা হচ্ছে। তবে কারও স্বাভাবিক চলাচলে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। জেলার নিরাপত্তায় ৯ শতাধিক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
পুলিশের পাশাপাশি মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন সড়কে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন। নেতা-কর্মীরা একসঙ্গে জড়ো হয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে অনেক নেতা-কর্মীকে মোটরসাইকেল নিয়ে শহরের প্রধান সড়কগুলোতে মহড়া দিতে দেখা গেছে।