কসবায় তুচ্ছ ঘটনার জেরে প্রবাসীকে ছুরি মেরে হত্যা, গ্রেপ্তার ২
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ফসলি জমিতে ফুটবল পড়া নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার জেরে হারুনুর রশিদ নামের এক প্রবাসীকে রাতের আঁধারে বাড়ির বাইরে ডেকে এনে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে উপজেলার বায়েক ইউনিয়নের খাদলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত হারুনুর রশিদ (৫০) ওই ইউনিয়নের খাদলা গ্রামের মৃত আবুল হাসেমের ছেলে। দীর্ঘদিন কাতারে থেকে দুই বছর আগে একেবারে দেশে ফিরে আসেন। পরিবারের কথা ভেবে তিনি আবার মালয়েশিয়ায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আগামী ৫ মে তাঁর মালয়েশিয়ায় যাওয়ার কথা ছিল।
হত্যাকাণ্ডের পর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য আজ শুক্রবার সকালে সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির স্ত্রী লাকী আক্তার বাদী হয়ে স্থানীয় সাগর মিয়াকে প্রধান আসামি করে সাতজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। মামলার পর ফিরোজ ও তাঁর স্ত্রী রত্না আক্তারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ, নিহত ব্যক্তির স্বজন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বায়েক গ্রামে বাড়ির পাশে নিজের জমিতে তিল চাষ করেছেন প্রবাসী হারুনুর রশিদ। খেতের ফসল রক্ষায় চারদিকে জাল দিয়ে বেড়া দেন। গত বুধবার বিকেলে ওই খেতের পাশে ফুটবল খেলছিলেন স্থানীয় আবদুর রহমানের ছেলে বায়েজিদ, ফিরোজ মিয়ার ছেলে সাগরসহ কয়েকজন। তখন ফুটবল তিলখেতে পড়লে হারুনুর রশিদ তাঁদের বকা দেন। এ নিয়ে তাঁদের সঙ্গে হারুনুর রশিদের বাগ্বিতণ্ডা হয়।
এলাকাবাসী জানান, বিষয়টি মীমাংসার জন্য গতকাল রাতে হারুনুর রশিদকে খবর দেন বায়েজিদের দাদা আনু মিয়া। খবর পেয়ে হারুনুর রশিদ আনু মিয়ার বাড়িতে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে বায়েজিদ, সাগরসহ কয়েকজন হারুনুর রশিদকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করেন বলে অভিযোগ ওঠে। তখন হারুনুর রশিদের চিৎকারে এলাকাবাসী ও স্বজনেরা এগিয়ে এসে তাঁকে উদ্ধার করে কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে ওই প্রবাসীর পরিবারে মাতম চলছে। স্ত্রী লাকী আক্তার বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। স্বজনদের আহাজারি থামছে না। নিহত প্রবাসীর ছোট ভাই জিলানী মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাই সহজ-সরল মানুষ। কাতার থেকে দুই বছর আগে একেবারে দেশে চলে আসেন। পরিবারের কথা ভেবে আবার মালয়েশিয়া যেতে চেয়েছিলেন। আগামী ৫ মে তাঁর ফ্লাইট ছিল। সামান্য বিষয় নিয়ে বায়েজিদ, সাগরসহ কয়েকজন তাঁকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে। আমরা খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’ হত্যাকারী তাঁদের ও স্বজনদের হুমকি দিচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
অভিযুক্ত সাগর মিয়াকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অভিযুক্ত অন্যরাও ঘটনার পর গা ঢাকা দিয়েছেন। অভিযোগের বিষয়ে তাঁদের মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করেও তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে তাঁদের স্বজনেরাও কথা বলতে রাজি হননি।
বায়েক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, হারুনুর রশিদ এলাকায় ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত। এলাকায় এমন কোনো লোক নেই, তাঁর বিরুদ্ধে কিছু বলবেন। তিনি বলেন, তিলখেতে ফুটবল পড়া নিয়ে তর্কাতর্কির জেরে স্থানীয় কয়েকজন ছুরিকাঘাত করে তাঁকে হত্যা করেছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজু আহমেদ বলেন, জমিতে ফুটবল পড়ায় হারুনুর রশিদ ওই ব্যক্তিদের বকা দিয়েছিলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রাতের বেলা ছুরিকাঘাত করে তাঁকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহত প্রবাসীর স্ত্রী সাতজনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করেছেন। নিহত প্রবাসীর শরীরে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন আছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় এজাহারভুক্ত দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।