তেঁতুলিয়ায় মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা, ঝলমলে রোদে কিছুটা স্বস্তি
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় আজ শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে, যা চলতি শীত মৌসুমে সবচেয়ে কম। দেশের সর্ব–উত্তরের এ জনপদে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। তবে সকালে ঝলমলে রোদের দেখা মিলেছে কিছুটা স্বস্তি।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এ সময়ে বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৯৯ শতাংশ। প্রতি ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ ১০-১২ কিলোমিটার। এর আগে গত ১৩ ডিসেম্বর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছিল। আবহাওয়াবিদদের মতে, কোনো এলাকায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে ওই এলাকার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। সে হিসাবে তেঁতুলিয়ায় বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।
উত্তরের এ জনপদে গত মঙ্গলবার থেকে বেড়েছে কুয়াশা ও শীতের দাপট। গত বুধবার দিনভর সূর্যের দেখা না যাওয়ায় ওই দিন অনুভূত হয় কনকনে শীত। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বল্প সময়ের জন্য রোদের দেখা মিললেও সন্ধ্যার পর থেকে আবারও বাড়তে থাকে শীতের তীব্রতা। তবে কমে যায় কুয়াশার দাপট। রাতভর উত্তরের হিমেল বাতাসে কাবু হয় এ জনপদের বাসিন্দারা। তবে আজ সকাল সাড়ে সাতটার দিকে সূর্যের দেখা মেলায় তাঁদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।
আজ সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হালকা কুয়াশার সঙ্গে বইছে উত্তরের হিমেল বাতাস। সড়কে কিছু যানবাহন চলাচল করছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। কনকনে শীতের মধ্যেই গায়ে শীতের কাপড় জড়িয়ে কর্মজীবী মানুষ ছুটছেন কাজের সন্ধানে। কেউ সবজিখেতে সংগ্রহ করছেন সবজি, কেউ তা ভ্যানে করে বিক্রি করতে নিয়ে যাচ্ছেন বাজারে। আবার কেউ কৃষিজমিতে হালচাষ করার পাশাপাশি বপন করছেন নানা শাকসবজির বীজ। শহরে যাত্রী নিয়ে ছুটছেন রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইকের চালকেরা। এরই মধ্যে সকাল সাড়ে সাতটার দিকে পূর্ব আকাশে উঁকি দেয় সূর্য। ধীরে ধীরে ফুটতে থাকে ঝলমলে রোদ। আর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে মানুষের কর্মব্যস্ততা। তবে উত্তরের ঝিরিঝিরি বাতাসে শীতের তীব্রতা খুব একটা কমেনি।
আজ সকাল সোয়া আটটার দিকে পঞ্চগড় পৌরসভার তুলারডাঙ্গা এলাকায় লাল শাক বিক্রি করতে যান কৃষক হোসেন আলী। তিনি বলেন, ‘সকালে শাক তুলিবা আসে ঠান্ডাতে হাত-পাওলা (পাগুলো) অবশ হয়ে আসেচে। কয়দিন তকা (থেকে) খুপ ঠান্ডা, সহা যায় না। কিন্তু আইজকা বেলাডা তাড়াতাড়ি উঠিচে। এ্যাল কনেক (একটু) আরাম পাওয়া যাছে।’
সকাল সাড়ে আটটার দিকে পঞ্চগড় পৌসভার মিলগেট-দরজিপাড়া এলাকায় আখবীজ কাটার কাজ করছিলেন রোকেয়া খাতুন (৫৫)। তিনি বলেন, ‘ঠান্ডাতে কামকাজ করিবা পারুনা বাপু। কয় দিন তকা (থেকে) যে কুহা (কুয়াশা) কিচ্ছু দেখা যায় না। আইজ সকালে রোদ উঠিচে তাতে কনেক (একটু) ভালো নাগেছে। কিন্তু বাতাসখান কমেনি। বাসাতখান বরফের মতো ঠান্ডা কচ্ছে।’
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্র নাথ রায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানান, হিমালয়ের হিম বায়ু এ এলাকায় সরাসরি প্রবেশ করছে। ফলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আকাশে মেঘের পরিমাণ কমে গেছে। সেই সঙ্গে সকাল সকাল কুয়াশা কেটে গিয়ে ঝলমলে রোদের দেখা মিলেছে। মৃদু শৈত্যপ্রবাহেও দিনের বেলা ঝলমলে রোদ থাকায় জনজীবনে কিছুটা স্বস্তি থাকবে।
শীত নিবারণের জন্য পঞ্চগড়ের শীতার্ত মানুষের জন্য সরকারিভাবে ৩০ হাজার ৭৫টি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক সাবেত আলী। তিনি বলেন, এ ছাড়া বেসরকারিভাবে বিভিন্ন সংগঠন জেলার বিভিন্ন এলাকায় কম্বল ও শীতবস্ত্র বিতরণ করছে।