শ্রীপুরে চোখ বেঁধে মারধরের ভিডিও পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবি
নারায়ণগঞ্জ থেকে গাজীপুরে রওনা করে অপহরণের শিকার হয়েছেন শরিফুল ইসলাম (৩৭) নামের এক ব্যক্তি। অপহরণকারীরা শরিফুলকে মারধর করে সেই ভিডিও স্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছেন।
সর্বশেষ আজ শনিবার দুপুর ১২টায় অপহরণকারীরা পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে রাত আটটার আগে দেখা করতে তাগিদ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন অপহৃত শরিফুলের স্ত্রী রত্না আক্তার। তাঁকে গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা এলাকায় এসে টাকা দিয়ে স্বামীকে ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে বলেছেন অপহরণকারীরা।
শরিফুল ফরিদপুরের সালথা উপজেলার মোকসেদপুর গ্রামের শান্টু মোল্লার ছেলে। তিনি নারায়ণগঞ্জ সদর এলাকায় একটি গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি করেন।
রত্না আক্তার আজ রাত ১০টার দিকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, রাত আটটার আগেই তিনি শ্রীপুরের মাওনা এলাকায় গিয়েছিলেন। কিন্তু অপহরণকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। অপহরণকারীরা বেশির ভাগ সময় মুঠোফোন বন্ধ রাখেন। পুলিশ শরিফুলকে উদ্ধারের চেষ্টা করছে। এখনো উদ্ধার হয়নি।
অপহৃত শরিফুলের স্ত্রী রত্না আক্তার আরও বলেন, অফিস ছুটি থাকায় শরিফুল গতকাল শুক্রবার বিকেলে তাঁর এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গাজীপুর রওনা করেছিলেন। এরপর রাত আটটার দিকে স্বামীর মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পান তিনি। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে স্বামীর মুঠোফোন নম্বর থেকে অপরিচিত কণ্ঠের এক ব্যক্তি তাঁকে ফোন দেন। তাঁরা শরিফুলের কাছে অবৈধ জিনিসপত্র পাওয়া গেছে জানিয়ে তাঁকে ছাড়াতে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। এরপর স্বামীর মুঠোফোন নম্বর থেকে রাতভর কয়েক দফা ফোন দিয়ে টাকার বিষয়ে কথা বলেন অপহরণকারীরা। একপর্যায়ে অপহরণকারীরা রত্নার কাছে শরিফুলের চোখ ও হাত বাঁধা অবস্থায় একটি আড়াই মিনিটের ভিডিও ক্লিপ পাঠান। ওই ভিডিওতে শরিফুলকে মারধর করতে দেখা যায়।
রত্না আক্তার আরও বলেন, ভিডিও দেখে পরিবারের সবাই কান্নাকাটি শুরু করেন। টাকা জোগাড়ের চেষ্টা চালান। গতকাল ভোররাত চারটার দিকে এক লাখ টাকা জোগাড় হয়েছে জানালে অপহরণকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন। আজ দুপুর ১২টার দিকে অপহরণকারীরা তাঁকে ফোন দিয়ে বলেছেন, রাত আটটার আগে টাকা দিয়ে তাঁর স্বামীকে ছাড়িয়ে নিতে হবে।
স্ত্রীর কাছে স্বামীর মুঠোফোন নম্বর থেকে পাঠানো আড়াই মিনিটের ভিডিওতে দেখা যায়, একটি গাড়ির পেছনের আসনে এক ব্যক্তিকে চোখ ও হাত বেঁধে বসিয়ে রাখা হয়েছে। অজ্ঞাত কয়েকজন কিছুক্ষণ পরপর তাঁকে কাঠের লাঠি দিয়ে মারধর করছেন। তাঁর কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য নিচ্ছেন। অপর দিকে মুক্তিপণ দাবির বিষয়ে অপহৃত শরিফুলের স্ত্রীর সঙ্গে অপহরণকারীদের কথোপকথনের কয়েকটি অডিও ক্লিপ প্রথম আলোর কাছে এসেছে। এসব অডিও ক্লিপের একটিতে অপহরণকারীদের বলতে শোনা যায়, ‘আপনি একটা খারাপ মহিলা। টাকা দিচ্ছেন না। ঠিক আছে। আপনার স্বামীরে মাইরা ফালাব। তারপর আপনি বুঝতে পারবেন।’
রত্না আক্তার বলেন, এ ঘটনায় তিনি শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেছেন। তিনি তাঁর অভিযোগ জানিয়েছেন।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ‘একজন ব্যক্তি অপহরণের শিকার হয়েছেন বলে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের ভিত্তিতে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে আমাদের পুলিশের টিম কাজ শুরু করেছে।’