সাংবাদিক গোলাম রব্বানি হত্যার এক বছরেও অভিযোগপত্র জমা পড়েনি, ক্ষুব্ধ পরিবার
জামালপুরের বকশীগঞ্জে সাংবাদিক গোলাম রব্বানিকে (নাদিম) হত্যার ঘটনার এক বছরেও মামলার অভিযোগপত্র দিতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এতে হতাশা প্রকাশ করেছেন নিহত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের অভিযোগ, প্রভাবশালী আসামিদের বাঁচাতেই এটি নিয়ে গড়িমসি করা হচ্ছে। ন্যায় বিচার নিশ্চিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযোগপত্র দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
পেশাগত দায়িত্ব শেষে বাড়ি ফেরার পথে গত বছরের ১৪ জুন রাত ১০টার দিকে বকশীগঞ্জ উপজেলার পাটহাটি এলাকায় হামলার শিকার হন গোলাম রব্বানি। পরদিন বেলা আড়াইটার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি অনলাইন পোর্টাল বাংলা নিউজ টোয়েন্টি ফোর ডটকমের জামালপুর জেলা প্রতিনিধি এবং একাত্তর টিভির বকশীগঞ্জ উপজেলার সংবাদ সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করতেন।
এই হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত মাহমুদুল আলম ওরফে বাবু। তিনি উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও একই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) তৎকালীন চেয়ারম্যান ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে তাঁকে উভয় পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়।
হত্যার তিন দিন পর ১৭ জুন গোলাম রব্বানির স্ত্রী মনিরা বেগম থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এজাহারে আসামি হিসেবে উপজেলার মাহমুদুল আলম ও তাঁর ছেলে ফাহিম ফয়সাল ওরফে রিফাতসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এতে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে। বর্তমানে প্রধান আসামিসহ সাতজন জেলে আছেন।
নাদিম হত্যা মামলার অভিযোগপত্র আদালতে না জমা না পড়ায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁর স্ত্রী মনিরা বেগম। তিনি বলেন, আসামিরা প্রথমে ব্যস্ততম এলাকায় চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে টেনেহিঁচড়ে তাঁকে (রব্বানি) নামান। তাঁকে উপর্যুপরি কিল-ঘুষি দিতে দিতে দিতে অন্ধকার টিঅ্যান্ডটি সড়কে নিয়ে যান। সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিল আরও ২০-২৫ জন সন্ত্রাসী। সবাই মিলে যে যেভাবে পারছিলেন, তাঁকে (রব্বানি) পেটাচ্ছিলেন। এ ছাড়া মূল অভিযুক্ত মাহমুদুল আলম ওরফে বাবু ও তাঁর ছেলে ফাহিম ফয়সাল ওরফে রিফাত ইট দিয়ে তাঁকে মাথায় আঘাত করেন। এতেই তাঁর মৃত্যু হয়।
মনিরা যোগ করেন, ‘হামলার ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আছে। তারপরও রহস্যজনক কারণে তাঁরা মামলার অভিযোগপত্র আদালতে নিচ্ছেন না। শুনতে পারছি, মামলা থেকে মাহমুদুল আলমের ছেলে ফাহিম ফয়সাল ওরফে রিফাতকে বাঁচানোর জন্যই অভিযোগপত্র দেওয়া হচ্ছে না। ফলে সঠিক বিচার পাওয়া নিয়ে আমাদের শঙ্কা আছে। আদৌ বিচার পাব কি না, তা নিয়েও সংশয় আছে।’
গোলাম রব্বানির মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাত বলেন, ‘আমার বাবাকে হত্যা করতে মাহমুদুল আলম ও তাঁর ছেলে ফাহিম ফয়সাল ওরফে রিফাত সরাসরি অংশ নেয়। তাঁরা দুজন বাবার (নাদিম) মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করেছিল। অথচ এক বছরেও মামলা ২ নম্বর আসামি মাহমুদুল আলমের ছেলেকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এ ছাড়া এক বছরেও মামলার অভিযোগপত্রও দেওয়া হয়নি। তাই বিচার পাওয়া নিয়ে আমাদের আশঙ্কা আছে। আসামিরা অনেক প্রভাবশালী। তাঁদের বাঁচাতেই মামলার অভিযোগপত্র নিয়ে গড়িমসি করা হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযোগপত্র চাই।’
আমার বাবাকে হত্যা করতে মাহমুদুল আলম ও তাঁর ছেলে ফাহিম ফয়সাল ওরফে রিফাত সরাসরি অংশ নেয়। তাঁরা দুজন বাবার (নাদিম) মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করেছিল। অথচ এক বছরেও মামলা ২ নম্বর আসামি মাহমুদুল আলমের ছেলেকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।গোলাম রব্বানির মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাত
মামলার তদন্ত নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী ইউসুফ আলীও। তিনি বলেন, এক বছরেও মামলার অভিযোগপত্র দিতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অথচ মামলাটি একদম পরিষ্কার। হামলার সিসিটিভির ফুটেজ আছে। মামলার তদন্তকাজও খুব ধীরগতিতে হচ্ছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও জামালপুর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) উপপরিদর্শক (এসআই) গোলাম কিবরিয়া বলেন, মামলার তদন্ত কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে। খুব শিগগিরই অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। এটি একটি আলোচিত মামলা। এতে অভিযুক্ত কেউ ছাড় পাবে না।