বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বেলা আড়াইটা থেকে সোয়া তিনটা পর্যন্ত বানারীপাড়া উপজেলার বাইশারী গ্রামে দুই দফায় পাল্টাপাল্টি হামলায় পুরো এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফাইয়াজুল হক অভিযোগ করেন, দুপুরে বানারীপাড়া উপজেলার বাইশারী গ্রামে তাঁর সমর্থকদের একটি মিছিলে নৌকার প্রার্থী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের সমর্থকেরা হামলা ও গুলি চালান। এতে তাঁর অন্তত ৪০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন এবং ১২টি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়েছে।
বিশারকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন, তাঁরা সাত-আটটি মোটরসাইকেলে করে ২০-২২ জন নেতা-কর্মী নিয়ে বিশারকান্দি ইউনিয়নে গণসংযোগ শেষে বটতলা বাজারে যান। হঠাৎ ৪০-৫০টি মোটরসাইকেল নিয়ে ঈগলের সমর্থক যুবলীগের নেতা মহসিন, জুলহাস, তারেক, উজ্জ্বলের নেতৃত্বে শতাধিক সমর্থক হাতুড়ি, লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাঁদের ওপর হামলা চালান। এ সময় মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।
হামলায় গুরুতর আহত নৌকার সমর্থক বানারীপাড়া সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনির মল্লিক, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মু মুন্তাকিম লস্কর কায়েস, যুবলীগের নেতা মাসুম বিল্লাহ, আতিক বাপ্পী, মনির খান, পলাশ খান, সিরাজুল ইসলাম, রাজু, শামীম, মিলন, জুয়েল ডাকুয়া, মনির খলিফা, মাসুম খান, রোকনুজ্জামান রাসেল ও সিরাজ ফকির এবং ঈগলের সমর্থক সাইজউদ্দিনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি ও চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হকের নাতি ফাইয়াজুল বলেন, এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হবে। সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। কমিশন ও নির্বাচন–সংশ্লিষ্টরা কী ব্যবস্থা নেয়, সেটাও দেখবেন তিনি। আওয়ামী লীগের নেতাদের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হবে। এ হামলা চালিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ভঙ্গ করেছেন হামলাকারীরা। তাঁরা কীভাবে আওয়ামী লীগের নেতা হন। নিজেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সদস্য দাবি করে ফাইয়াজুল বলেন, ‘আমার দাদা ছিলেন শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক। বাবা ফায়জুল হক আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী ছিলেন। এ হামলা মেনে নেওয়া যায় না।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপজেলার বাইশারী থেকে ফাইয়াজুল হকের কর্মীরা ৩০-৩৫টি মোটরসাইকেলে মিছিল নিয়ে ইলুহারের উদ্দেশে রওনা দেন। বাইশারী কলেজের সামনে সানা-ননীর নেতৃত্বে শতাধিক লোক মিছিলে হামলা করেন। তাঁরা মিছিলে থাকা লোকজনের ওপর ফাঁকা গুলি করেন এবং এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করেন। পরে বিজিবির সদস্যরা এলে হামলাকারীরা চলে যান। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে উপজেলা ও বরিশালের শের-ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক বলেন, নৌকার গণজোয়ার ও নিজেদের পরাজয় আঁচ করতে পেরে ঈগলের সমর্থকেরা পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে তাঁদের আহত করেছেন এবং নিজেরা মোটরসাইকেল পুড়িয়েছেন। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
বানারীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের ১২টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং চারটি ভাঙচুর করা হয়েছে। তবে কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বা স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীরা কেউ আহত হয়েছেন কি না, তা জানি না।’