কেরানীগঞ্জে নির্বাচনী প্রচারণাকালে চেয়ারম্যান প্রার্থীর স্ত্রীর গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ
ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী আলতাফ হোসেনের (কাপ-পিরিচ প্রতীক) স্ত্রী সোনিয়া আক্তারের গাড়ি ভাঙচুর ও নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার বিকেলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়নের স্ট্যান্ড বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী সোনিয়া দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
সোনিয়া আক্তার বলেন, ‘গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে আমার স্বামী আলতাফের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা করার জন্য আমি ও আমার লোকজন নিয়ে একটি কালো রঙের মাইক্রোবাস ও সাদা রঙের প্রাইভেট কারযোগে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়নের স্ট্যান্ড বাজার এলাকায় যাই। এ সময় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা দুটি মোটরসাইকেল ও আনারস মার্কার পোস্টার সাঁটানো একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাস নিয়ে এসে আমাদের পথ রোধ করেন। এ সময় তাঁরা আমাদের গালিগালাজসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেন ও ভয়ভীতি দেখান। এ সময় তাঁরা আমাদের নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে নিষেধ করেন। একপর্যায়ে তাঁরা লোহার রড দিয়ে আমাদের গাড়ির বাঁ পাশের দরজার নিচে আঘাত করেন। এতে আমাদের গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর তাঁরা আমাদের গাড়ি পেট্রল দিয়ে পুড়িয়ে আমাদের জানে মেরে ফেলবেন বলে হুমকি দিয়ে চলে যান। এ ঘটনায় আমি থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’
কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চেয়ারম্যান প্রার্থী আলতাফ হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার ভয়ে আনারস প্রতীকের লোকজন আমার নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দিয়ে গাড়িতে অতর্কিতভাবে হামলা করেছে। হামলার এক পর্যায়ে তাঁরা আমার স্ত্রীসহ সমর্থকদের আগুনে পুড়িয়ে মারার হুমকি দিয়েছে। আমি এ হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এ ব্যাপার নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।’
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ম ই মামুন বলেন, ‘কাপ-পিরিচ প্রতীকের প্রার্থীর স্ত্রীর গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগটি কতটুকু সত্য, সেটি প্রশাসন তদন্ত করে বের করবে। আদৌ এ ঘটনা ঘটেছে কি না, সে ব্যাপারে আমি সন্দিহান। এটা তাদের নির্বাচনের অপকৌশল হতে পারে।’
এদিকে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী কেরানীগঞ্জ মডেল থানা যুবলীগের আহ্বায়ক মনির হোসেন তাঁর (তালা প্রতীক) নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা, পোস্টার ছেঁড়া ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ এনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
গত সোমবার মনির হোসেন কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে এ অভিযোগ দেন।
এ ব্যাপারে মনির হোসেন বলেন, ‘আমি ইতিমধ্যে কেরানীগঞ্জের ১২টি ইউনিয়নে প্রচার-প্রচারণা, গণসংযোগ, পোস্টার ও প্রচারপত্র বিতরণ করেছি। এ সময় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাাধীন কালীগঞ্জ বাজার, চুনকুটিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, কোন্ডা ইউনিয়নের কাওটাইল, হাসনাবাদ, জিনজিরার ডাকপাড়াসহ কয়েকটি স্থানে আগনগর ইউপির ওয়ার্ড সদস্য রাসেল মেম্বার এবং জিনজিরা ইউপির ওয়ার্ড সদস্য দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক রমজান আলীর নেতৃত্বে দুর্বৃত্তরা আমার নির্বাচনী প্রচারণা বাধা দিয়ে আমাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ও নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’
এ বিষয়ে জানতে রমজান আলীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা ধরেননি।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন অর রশিদ বলেন, ‘কাপ-পিরিচ প্রতীকের প্রার্থীর স্ত্রীর গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ ঘটনায় কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) আহ্বায়ক করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ঘটনায় তদন্ত চলছে।’
কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা সুমন মিয়া বলেন, ‘কাপ-পিরিচ প্রতীকে চেয়ারম্যান প্রার্থীর স্ত্রীর গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগটি তদন্ত কমিটি খতিয়ে দেখছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। তালা প্রতীকের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় বাধা, পোস্টার ছেঁড়া ও প্রাণনাশের হুমকির ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া পুনরায় এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে দোষী প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে মর্মে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।’