পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে শেরপুরের নতুন এলাকা প্লাবিত, পানিবন্দী ৩০ হাজার মানুষ
পাহাড়ি ঢলের পানি নিম্নাঞ্চলে নেমে আসায় এবং ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় শেরপুরের চার উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নতুন করে নিম্নাঞ্চলের অনেক এলাকায় মানুষের বাড়িঘরে পানি উঠেছে। সব মিলিয়ে ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী, শেরপুর সদর ও নকলা উপজেলার ২০ ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে।
অতিবৃষ্টি এবং মহারশী ও সোমেশ্বরী নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় গত শুক্রবার শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সদর বাজার, উপজেলা পরিষদ চত্বরসহ ৪০ গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে ঝিনাইগাতী সদর, ধানশাইল, গৌরীপুর ও হাতীবান্ধা ইউনিয়নের প্রায় ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। শনিবার আরও ১০টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় সব মিলিয়ে উপজেলার ৫০টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়।
উপজেলা ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, রোববার ভোররাত থেকে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় এবং মহারশী ও সোমেশ্বরী নদীর পানি নিম্নাঞ্চলে নেমে আসায় বর্তমানে ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর, ধানশাইল, গৌরীপুর, নলকুড়া, হাতিবান্ধা ও মালিঝিকান্দা ইউনিয়ন; শ্রীবরদী উপজেলার সিঙ্গাবরুণা, রানীশিমুল, কাকিলাকুড়া, তাতিহাটী, গোসাইপুর ও গড়জরিপা ইউনিয়ন; শেরপুর সদর উপজেলার গাজীরখামার, ধলা ও বাজিতখিলা ইউনিয়ন এবং নকলা উপজেলার পৌরসভা (আংশিক), গণপদ্দি, নকলা সদর ও উরফা ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী প্রায় ৩০ হাজার মানুষ।
আজ রোববার দুপুরে সরেজমিনে শেরপুর সদরের গাজীরখামার ও বাজিতখিলা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে দেখা যায়, গাজীরখামার বাজার থেকে চকপাড়া হয়ে কড়ইকান্দা পর্যন্ত সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এই সড়কে এলাকাবাসী পানি মাড়িয়ে চলাচল করছে। সড়কের গাজীরখামার পূর্বকান্দাপড়া গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে।
গাজীরখামার পূর্বকান্দাপড়া গ্রামের নলকূপমিস্ত্রি লোকমান মিয়া বলেন, ঘরে পানি উঠেছে। বর্তমানে পরিবার নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। কোনো সাহায্য পাননি। এই গ্রামের বাসিন্দা সালেহা বেগম বলেন, ঘরে পানি উঠেছে। চুলাসহ সবকিছু পানিতে ডুবে গেছে। চিড়া, মুড়ি খেয়ে রয়েছেন। কোনো সাহায্য পাননি।
গাজীরখামার ইউনিয়নের চকপাড়া গ্রামের মো. মনির উদ্দিন বলেন, তিনি দুই একর জমিতে আমন ধান আবাদ করেছিলেন। ঢলের পানিতে পুরো আবাদ তলিয়ে গেছে। এতে তিনি আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
বাজিতখিলা ইউনিয়নের চককুমরী গ্রামের কৃষক লাল চান বলেন, তাঁর বাড়িঘরে পানি উঠেছে। আমন ও সবজি আবাদ পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন সামনের দিনগুলো কীভাবে চলবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর শেরপুরের উপপরিচালক সুকল্প দাস জানান, পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির ফলে জেলার পাঁচ উপজেলায় ৩২ হাজার ১১৮ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন আবাদ সম্পূর্ণ এবং ১৪ হাজার ৬৭২ হেক্টর আংশিক নিমজ্জিত হয়েছে। ৩৯৬ হেক্টর জমির সবজি আবাদ সম্পূর্ণ এবং ৬৬৩ হেক্টর আংশিক নিমজ্জিত হয়েছে। পানি নেমে যাওয়ার পর চূড়ান্ত ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা যাবে।
জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান আজ রোববার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, বন্যাকবলিত মানুষের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ত্রাণের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন ইউনিয়নে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকেও ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।