সোনার খোঁজে খোঁড়াখুঁড়ি করা মাটি নিয়ে বিপাকে মালিক
ইট পোড়ানোর জন্য সংগ্রহ করে আনা জমির মাটিতে মিলছে সোনা—এমন খবরে কোদাল, খুনতি, শাবল, বসিলা নিয়ে দিন-রাত সোনা খোঁজার জন্য হুলুস্থুল কাণ্ড ঘটায় হাজারো মানুষ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করে ভাটার মালিককে সেই মাটি সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেয় প্রশাসন। কিন্তু মাটি সরাতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন ভাটার মালিক।
ইটভাটার মালিক রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৪৪ ধারা জারির পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভাটার মাটি অন্য কোনো জায়গায় সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্তূপে কম করে হলেও চার হাজার ট্রলি মাটি আছে। সেগুলো টানতে অনেক দিন লেগে যাবে। মাটি সরাতে যেমন শ্রম যাচ্ছে, তেমনি আর্থিক ক্ষতিও হচ্ছে। আমি প্রশাসনের নির্দেশ উপেক্ষা করতেও পারছি না।’
ইটভাটাটির নাম আরবি ব্রিকস। এটির অবস্থান ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার বাচোর ইউনিয়নের রাজোর গ্রামে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইটের কাঁচামাল হিসেবে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে ভাটায় স্তূপ করেন মালিক রুহুল আমিন। সম্প্রতি সেই মাটি কাটতে গিয়ে শ্রমিকেরা সোনা পেয়েছেন বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। এর পর থেকে কোদাল, খুনতি, শাবল, বসিলা নিয়ে সেখানে ভিড় করতে শুরু করেন গ্রামবাসী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খবর পেয়ে আশপাশের এলাকা এমনকি দূরদূরান্ত থেকেও লোকজন এসে সেখানে ভিড় করতে থাকেন। দিনের পাশাপাশি রাতেও সেখানে চলে সোনা খোঁজার কর্মযজ্ঞ। তবে কেউ সোনা পেয়েছেন কি না, তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেননি।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় গত শনিবার রাত থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এক বিজ্ঞপ্তিতে সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করেন রানীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রকিবুল হাসান।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৪৪ ধারা জারির পর গত রোববার পুলিশ ইটভাটায় অবস্থান নেয়। পরে তারা ইটভাটা ও আশপাশে লাল পতাকা উড়িয়ে দেয়। গতকাল সকালে সোনার সন্ধানে সেখানে কিছু মানুষজন এলেও পুলিশের অবস্থান দেখতে পেয়ে তারা এলাকা ছেড়ে যান। এ অবস্থায় ইউএনও মালিককে ভাটা থেকে মাটি সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেন। গতকাল মালিক ভাটার এসব মাটি তাঁর বাড়ি পীরগঞ্জ উপজেলার সেনুয়া গ্রামের একটি জায়গায় নিয়ে ফেলতে শুরু করেন।
ভাটার মাটি নিয়ে হুলুস্থুল কাণ্ড আর দেখতে চান না জানিয়ে রানীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রকিবুল হাসান বলেন, ভাটায় মাটি থেকে গেলে ১৪৪ ধারা জারি তুলে নেওয়ার পর লোকজন আবারও সেখানে সোনা খুঁজতে চলে আসতে পারেন। এ আশঙ্কা থেকেই ভাটার মালিককে অন্য জায়গায় মাটিগুলো সরিয়ে নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে মালিকের কিছু আর্থিক ক্ষতি মেনে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।