ইভিএমে ভোট পুনর্গণনার সুযোগ নেই, হাইকোর্টে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন হিরো আলম
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে একতারা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৮৩৪ ভোটে হেরে যাওয়া আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম ৪৫টি কেন্দ্রের ভোট পুনর্গণনার জন্য লিখিত আবেদন করেছেন।
এ বিষয়ে আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে বগুড়া জেলার জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান প্রথম আলোকে বলেছেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএমে) ভোট পুনর্গণনার কোনো সুযোগ নেই। হিরো আলমের আবেদন নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে হাইকোর্টে রিট করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন হিরো আলম। বগুড়া-৪ আসনের ৪৫টি কেন্দ্রের ভোট পুনর্গণনা চেয়ে গতকাল রোববার দুপুরে বগুড়া জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলামের কাছে লিখিত আবেদন জমা দেন হিরো আলম। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, কাহালু ও নন্দীগ্রাম উপজেলার ৪৫টি কেন্দ্রের ফলাফল তাঁর কাছে সন্দেহজনক মনে হয়েছে। এ জন্য এসব কেন্দ্রের ভোট পুনরায় গণনা করে ফলাফল প্রকাশ করা প্রয়োজন।
হিরো আলম বগুড়া-৬ আসনে জামানত হারালেও বগুড়া-৪ আসনে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছিলেন। ১৪-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাসদের এ কে এম রেজাউল করিমের কাছে ৮৩৪ ভোটে হেরে যান তিনি। এরপর হিরো আলম অভিযোগ করেন, ভোটের ফলাফলে কারচুপি করে তাঁকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রভিত্তিক ইভিএমের ভোটের প্রিন্ট কপি ও ৪৫টি কেন্দ্রের ভোট পুনর্গণনা চেয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেন।
ইভিএমের ভোট পুনর্গণনার সুযোগ নেই—জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার এমন মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে হিরো আলম বলেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বিজয়ী হলে সংসদ ছোট হবে, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্যারের বক্তব্যের পর নিশ্চিত হয়েছি, নির্বাচন কমিশন চাপে পড়ে পরিকল্পিতভাবে আমার ফল পাল্টে দিতে বাধ্য হয়েছে। তবু ন্যায়বিচার পেতে কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলের প্রিন্ট কপিসহ ৪৫ কেন্দ্রের ফল পুনর্গণনার আবেদন করেছি। নির্বাচন কমিশনে ন্যায়বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে খুব দ্রুত ফল বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট করব।’
রোববার ভোট পুনর্গণনার জন্য বগুড়ার জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন দিতে এসে হিরো আলম পুনর্নির্বাচন দিয়ে সেখানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হওয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে হিরো আলম বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের স্যার কথায় কথায় বলেন, খেলা হবে। শক্তিশালী দল হলে খেলা হবে। খেলা হওয়ার মতো নাকি তিনি শক্তিশালী খেলোয়াড় খুঁজে পান না। তাঁকে জোর গলায় বলতে চাই, শক্তিশালী দলের সঙ্গে আপনাকে খেলতে হবে না। যেখানে মিথ্যা কথা বলে আমার ফল পাল্টে দেওয়া হয়েছে, সেই বগুড়া-৪ আসনের ভোটে আসুন, আমার সঙ্গে ভোট করে দেখুন। আপনি দল থেকে দাঁড়াবেন, আমি স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী হব। কেন্দ্রে কেন্দ্রে সিসিটিভি থাকবে।ভোটারদের ভয় দেখানো হবে না। সুষ্ঠু ভোট দিয়ে দেখুন তো দেখি, খেলা হয় কি না?’
গত শনিবার ঢাকায় আওয়ামী লীগের ‘শান্তি সমাবেশে’ দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘হিরো আলম এখন জিরো হয়ে গেছে।’ ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে হিরো আলম বলেন, ‘হিরোকে কেউ কখনো জিরো করতে পারে না। যাঁরা হিরোকে জিরো বানাতে চান, তাঁরাই জিরো হয়ে গেছেন।’
একই সমাবেশে ওবায়দুল কাদের দাবি করেন, জাতীয় সংসদকে খাটো করতে বিএনপি মো. আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমকে উপনির্বাচনে প্রার্থী করেছিল। এ বক্তব্য প্রসঙ্গে হিরো আলম আরও বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের স্যার বলেছেন, হিরো আলম পার্লামেন্টে (সংসদ) গেলে নাকি পার্লামেন্ট ছোট হবে। আমি যদি পার্লামেন্টে গেলে পার্লামেন্টকে ছোট করা হয়, তাহলে যখন মনোনয়ন কিনেছি, তখন তো তাঁরা বলেননি, যোগ্যতা না থাকলে মনোনয়ন কিনতে পারবেন না। যখন আইন করা হয়, তখন তো তাঁরা এসব বলেননি।’