এই সরকার খুব বেশি দিন নাই, এ বছর যায় কি যায় না: গণসমাবেশে শামসুজ্জামান
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, ‘এই সরকার খুব বেশি দিন নাই। এ বছর যায় কি যায় না। আমাদের নেতা–কর্মীরা অনেক কষ্ট করেছেন। আর বেশি দিন কষ্ট করা লাগবে না। অনতিবিলম্বে এই সরকার পদত্যাগে বাধ্য হবে। কেয়ারটেকারের (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) অধীনে নির্বাচন হবে এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসবেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।’
আজ শনিবার খুলনার বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। নগরের ডাকবাংলা সোনালী ব্যাংক চত্বরে আয়োজিত গণসমাবেশে কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘শিগগিরই আপনাদের ঢাকা বিমানবন্দরে যাওয়া লাগবে। আমাদের নেতা আসবেন, তাঁকে বিমানবন্দরে রিসিভ করতে (স্বাগত জানাতে) আপনারা সবাই তৈরি আছেন?’
সরকার এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশ্যে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যদি সত্যিকারের ইলেকশন (নির্বাচন) হয়, আপনারা ১০টার বেশি আসন পাবেন কি না, সন্দেহ আছে। সময় থাকতে বেগম জিয়াকে মুক্তি দেন। তারেক রহমানকে সসম্মানে দেশে আসার সুযোগ দেন। যারা জেলে আছে মুক্তি দেন। ১ লাখ মামলায় যে ৩৬ লাখ আসামি করেছেন, সেসব মামলা প্রত্যাহার করেন। না হলে আজ জনতা বিচারের জন্য তৈরি আছে।’
যেভাবে হেঁটে মানুষ সমাবেশে পৌঁছেছেন, সেভাবে প্রয়োজনে হেঁটে হেঁটে মানুষ গণভবনে পৌঁছে যাবেন। সরকারপ্রধানকে মসনদ থেকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি প্রতিষ্ঠা করবেন।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিএনপির ৫ জন নেতা–কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, তাঁরা এমনি এমনি ছেড়ে দেবেন না। দাবি একটাই পদত্যাগ করেন; দাবি একটাই চোরাই সংসদ ভেঙে দেন। দাবি একটাই আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর অধীনে কোনো নির্বাচন বাংলাদেশে হবে না।
পৃথিবীর সবখানে যখন সরকারের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে বিরোধী দল হরতাল ডাকে। সেখানে সরকার নিজের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে নিজেই হরতাল ডেকে বসে আছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান সমাবেশে বলেন, আগামী কোনো নির্বাচন হতে হলে আওয়ামী লীগের অধীনে তা হবে না। খুলনার মানুষ প্রমাণ করছে তারা এই সরকারকে ভয় করে না। সরকার চেয়েছিল মানুষকে ভয় দেখিয়ে এ দেশ থেকে গণতন্ত্র হরণ করতে, মানুষের ভোটের অধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার হরণ করতে। তারা পারেনি, ব্যর্থ হয়েছে—এই সমাবেশ তার প্রমাণ। সরকার যখন বুঝতে পেরেছে জনতার ঢল ঠেকানো যাবে না। তখন শুধু ভয় দেখিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, তারা খুলনায় দুই দিনের ‘হরতাল’ ডেকে দিয়েছে।
আবদুল মঈন খান বলেন, পৃথিবীর সবখানে যখন সরকারের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে বিরোধী দল হরতাল ডাকে। সেখানে সরকার নিজের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে নিজেই হরতাল ডেকে বসে আছে।
সমাবেশে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম বলেন, ‘দুই দিন ধরে খুলনা বিভাগের মানুষকে পিঁপড়ার মতো হেঁটে হেঁটে সমাবেশে উপস্থিত হতে হয়েছে। কখনো গাড়িতে, কখনো ট্রেনে, কখনো মোটরসাইকেলে, কখনো নছিমনে বা হেঁটে এখানে এসেছেন। অনেকে হামলার শিকার হয়েছেন। পথে পথে বাধা পেয়েছেন। পথঘাট থেকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত বাহিনীরা দুর্বল ভেবে আজ খুলনা রেলস্টেশনে আমাদের আঘাত করতে চেয়েছিল, যশোরের মানুষ যথাযথ উত্তর তাদের দিয়েছেন।’
অনিন্দ্য ইসলাম বলেন, ‘শেখ হাসিনা, আপনি রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছেন। আমাদের নেতা–কর্মীদের ওপর যে আঘাত হেনেছেন, প্রতিটি আঘাতের রাজনৈতিক প্রতিশোধ নেব আমরা। যেভাবে হেঁটে মানুষ সমাবেশে পৌঁছেছেন, সেভাবে প্রয়োজনে হেঁটে হেঁটে মানুষ গণভবনে পৌঁছে যাবেন। সরকারপ্রধানকে মসনদ থেকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি প্রতিষ্ঠা করবেন।’
সমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির প্রধান সহ–সমন্বয়ক রকিবুল ইসলাম বলেন, বিরোধী দল হরতাল–অবরোধ ডাকে কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার নিজেই হরতাল ডেকে নিজেই নিজেদের বন্দী করেছে এবং প্রমাণ করে দিয়েছে এই সরকারের পতন এখন সময়ের ব্যাপার। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন, তাতে হয়তো জনগণ আপনাদের মাফ করলেও করতে পারে। তা না হলে পালাতে পারবেন না। পালাতে দেওয়া হবে না।
খুলনার আজকের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।