চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদরের ইসলামী ব্যাংক রোড এলাকায় ফুটপাতে বসেছে অস্থায়ী শীতবস্ত্রের বাজার। এখানে দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষের ভিড় বেশি দেখা যায়। স্থানীয়ভাবে শীতবস্ত্রের বাজারটি ‘গুলিস্তানবাজার’ হিসেবে পরিচিত। ৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে এখানে শীতবস্ত্র পাওয়া যায়।
গত মঙ্গলবার বিকেলে শীতবস্ত্রের ‘গুলিস্তানবাজারে’ কথা হয় শীতবস্ত্র কিনতে আসা দিনমজুর বিষ্ণুচন্দ্র বর্মণের সঙ্গে। তাঁর বাড়ি চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার বাইশপুর গ্রামে। বিষ্ণুচন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘এইবার শীতে কাবু অইয়া গেছি। বড় মার্কেটে শীতবস্ত্রের যে দাম, আমাগো মতো গরিবগো পক্ষে হেনো এগুলি কিনার সাধ্য নাই।টুকটাক কাম কইরা যা আয়রোজগার করি, হেইডা দিয়া ঠিকমতো সংসারের খরচই চলে না। দামি ও ভালা শীতের কাপড় কিনুম ক্যামনে। এলিগা এই বাজারে আইছি। কম দামে কয়েকটা শীতের কাপড় কিনছি। স্ত্রী ও ছেলে–মেয়েদের জন্যও কয়েকটা কিনছি। ৩০০ টেয়ায় সবার জন্য শীতবস্ত্র কিনতে পারছি। এইডা অইল গরিবের বাজার।’
গত মঙ্গলবার ও গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বাজার ঘুরে ক্রেতাদের ভিড় দেখা যায়। গরিব, অসহায় ও নিম্নআয়ের নারী-পুরুষদের এই বাজারে আনাগোনা বেশি। সোয়েটার, মাফলার, জাম্পার, জ্যাকেট, কানটুপি, হাত ও পা মোজা, কার্ডিগান, ব্লেজার, ট্রাউজারসহ বিভিন্ন ধরনের শীতবস্ত্র বিক্রি হচ্ছে।
‘বাইছা নিলে ৫০ টেয়া। ৫০ টেয়ায় পাইবেন সবকিছু। একটু ভালা নিলে ১০০ টেয়া। এর চেয়ে ভালা নিলে ২০০ টেয়া।’ ক্রেতাসাধারণের উদ্দেশে এমন হাঁকডাক দিয়ে শীতবস্ত্র বিক্রি করছিলেন সাগর হোসেন নামের একজন। তাঁর বাড়ি উপজেলার কলাদী এলাকায়।
আলাপকালে সাগর হোসেন বলেন, পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে অস্থায়ী দোকান পেতে শীতের বস্ত্র বিক্রি করছেন তিনি। ঢাকার গুলিস্তানবাজার থেকে শীতবস্ত্র কিনে সেগুলো মতলবের এই ‘গুলিস্তানবাজারে’ বিক্রি করছেন। প্রতিদিন ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকার বস্ত্র বিক্রি করছেন। এতে গড়ে প্রতিদিন লাভ হয় ৮০০ থেকে হাজার টাকা। শীতের তিন মাস এই মৌসুমি ব্যবসা করেন। শীত চলে গেলে অন্য পেশায় চলে যান। তবে তিন মাসের আয়ে ৬ মাস সংসারের খরচ চলে তাঁর।
এই বাজারের আরেক বিক্রেতা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শীত বেড়ে যাওয়ায় শীতবস্ত্রের চাহিদা ও বেচাকেনা অনেক বেড়েছে। সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলে শীতবস্ত্রের বেচাকেনা।
গরিব ও নিম্নআয়ের মানুষের শীতবস্ত্র বেচাকেনার জন্য এটি নির্ভরযোগ্য অস্থায়ী বাজার।
উপজেলার নবকলস এলাকার গৃহবধূ তাসলিমা আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী রিকশাচালক, রোজগার কম। এলিগা কম টেয়ায় গরম কাপড় কিনতে এনো আইছি। ১৫০ টেয়ায় তিনডা গরম কাপড় কিনছি। এহন শীতের অত্যাচার থেইক্কা বাঁচতে পারুম। এই বাজারডা অইল আমাগো ভরসার জায়গা। গরিবের শীতের বাজার। কম দামে গরম কাপড় কিইন্না বেশ ভালা লাগতাছে।’
মতলব বাজার বণিক ও জনকল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, গরিব ও নিম্নআয়ের মানুষের শীতবস্ত্র বেচাকেনার জন্য এটি নির্ভরযোগ্য অস্থায়ী বাজার। এই বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ রাখতে সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন তিনি।