মারা যাওয়া দুই শিশুর বাবা–মা হাসপাতাল ছেড়েছে, বাসায় আইইডিসিআরের দল
অজানা ভাইরাসে রাজশাহীতে দুই শিশুর মৃত্যুর পর সরেজমিনে তদন্ত শুরু করেছে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রতিনিধিদল। এ দলে তিনজন রয়েছেন। গতকাল রোববার রাতেই রাজশাহীতে পৌঁছে তাঁরা তাঁদের কার্যক্রম শুরু করেছেন।
এ দলে আছেন আইইডিসিআরের চিকিৎসা কর্মকর্তা ক্য থোয়াই প্রু প্রিন্স ও মো. মাইনুল হাসান। এ ছাড়া বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহের জন্য আছেন জ্যেষ্ঠ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। আজ সোমবার সকালে তাঁরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে গিয়ে চিকিৎসাধীন শিশু দুটির বাবা মনজুর রহমান (৩৫) ও মা পলি খাতুনের (৩০) সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে কথা বলেন।
এর আগে রাতেও তাঁদের সঙ্গে কথা বলে আইইডিসিআরের প্রতিনিধিদল। দুপুরে প্রতিনিধিদল হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে চারঘাটের সারদায় ক্যাডেট কলেজের উদ্দেশে রওনা দেয়। এরপর মনজুর রহমান ও পলি খাতুনকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এফ এম শামীম আহাম্মদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘দুই শিশুর মা–বাবা এখন শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন। তাই তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’
মনজুর রহমান চারঘাটের সারদায় অবস্থিত রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিতের শিক্ষক। তাঁর গ্রামের বাড়ি দুর্গাপুরের চুনিয়াপাড়া গ্রামে। তিনি দুই শিশুকন্যা ও স্ত্রীকে নিয়ে কলেজের কোয়ার্টারেই থাকতেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি গৃহকর্মী কলেজ ক্যাম্পাসের গাছের বরই এনে মনজুরের শিশুকন্যা দুই বছর বয়সী মুনতাহা মারিশা ও পাঁচ বছরের মুফতাউল মাশিয়াকে খেতে দিয়েছিলেন।
না ধোয়া বরই খাওয়ার পরদিন ১৪ ফেব্রুয়ারি ছোট মেয়ে মারিশার জ্বর আসে, সঙ্গে বমি। হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যায়। দুদিন পর ১৬ ফেব্রুয়ারি মাশিয়ারও জ্বর ও বমি শুরু হয়। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, রাজশাহীর সিএমএইচ হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়। পরদিন ১৭ ফেব্রুয়ারি বিকেলে মাশিয়াও মারা যায়। এ অবস্থায় প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কায় শিশু দুটির মা–বাবাকে আর হাসপাতাল থেকে যেতে দেওয়া হয়নি। তাঁদের সঙ্গনিরোধে (আইসোলেশন) রাখা হয়েছিল।
মারা যাওয়ার আগে দুই শিশুরই শরীরে ছোপ ছোপ কালো দাগ উঠেছিল। এটি নিপাহ ভাইরাসের লক্ষণ না হলেও শিশু দুটি এ ভাইরাস বা কোনো ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে আশঙ্কা করছিলেন চিকিৎসকেরা। তাই হাসপাতালে মারা যাওয়া শিশু ও তাদের মা–বাবার নমুনা পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়েছিল ঢাকায়। গতকাল নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে দেখা যায় যে তাঁরা কেউই নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন না। একটি ব্যাকটেরিয়ার পরীক্ষা করে তারও রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। তাই শিশু দুটি কোন জীবাণুতে (ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া) আক্রান্ত হয়েছিল, তা এ পর্যন্ত জানা যায়নি।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সরেজমিনে তদন্ত করতে আসা আইইডিসিআরের চিকিৎসা কর্মকর্তা ক্য থোয়াই প্রু প্রিন্স বলেন, ‘আমরা এসেছি। তদন্তের কাজ শুরু করেছি। কিন্তু আমরা কোনো মন্তব্য করতে পারব না। আমরা সরেজমিনে তদন্তে যা পাব, তা আমাদের কর্তৃপক্ষকেই জানাব।’
দলটির সঙ্গে ছিলেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘ল্যাবের পরীক্ষায় কিছু শনাক্ত করা যায়নি বলেই আইইডিসিআরের প্রতিনিধিদল ঢাকা থেকে এসেছে। তারা সরেজমিনে সবকিছু তদন্ত করে দেখবে। পাশাপাশি নমুনার আরও পরীক্ষা চলতে থাকবে। হাসপাতালে মারা যাওয়া শিশুটির পাকস্থলী থেকে খাবারের নমুনাও সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। সেটাও পরীক্ষা করা হবে। তাহলে জানা যাবে, খাবারে কোনো বিষক্রিয়া হয়েছিল কি না। আমরা সবাই দুই শিশুর মৃত্যুর কারণ জানতে চাই। এ জন্য যা যা করা প্রয়োজন, তার সবকিছুই করা হচ্ছে।’