বরগুনার নৌকা জাদুঘর পুরোপুরি ভেঙে দিয়েছেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা, নির্বিকার প্রশাসন
বরগুনায় নির্মিত দেশের একমাত্র নৌকা জাদুঘরটি পুরোপুরি ভেঙে দিয়েছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। আজ শনিবার সকাল ১০টা থেকে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শ্রমিক দিয়ে জাদুঘরটি ভেঙে ফেলেন। প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দুতে জাদুঘরটির অবস্থান হলেও এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়-সংলগ্ন ৭৮ শতাংশ জায়গায় ১৬৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩০ ফুট প্রস্থের একটি বৃহদাকার নৌকার আদলে জাদুঘরটি নির্মাণ করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক। এতে স্থান পায় বিভিন্ন অঞ্চলের বিলুপ্ত ও প্রচলিত ১০০ ধরনের নৌকার প্রতিকৃতি। নাম দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধু নৌকা জাদুঘর। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেখানে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এরপর আজ বিএনপির নেতা-কর্মীরা সেটি পুরোপুরি ভেঙে দেন।
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. শফিউল আলম বলেন, নৌকা জাদুঘর ভাঙা হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। সেটা তাঁদের অধীনে নয়, পৌরসভার অধীনে। বিষয়টি তিনি পৌর কর্তৃপক্ষকে জানানোর পাশাপাশি পুলিশকে জানিয়েছেন।
সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, বিএনপির নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে জাদুঘরের দুই পাশে আড়াআড়িভাবে কাটছেন বেশ কয়েকজর শ্রমিক। এ সময় জাদুঘরে ঢোকার মূল ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। যাতে কেউ ভেতরে ঢুকে ছবি তুলতে না পারেন। পরে সংবাদকর্মীদের ছবি তোলার অনুমতি মেলে। নৌকা জাদুঘরের পাশেই জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যালয়, দক্ষিণ পাশে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও আদালত ভবন, অদূরে পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও সদর থানা ভবন থাকলেও সেখানে কোনো পুলিশ সদস্যদের দেখা যায়নি।
জাদুঘর ভাঙার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রেজবুল কবির, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক মুরাদুজ্জামান খান, জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মুরাদুজ্জামান (টিপন), বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম, জেলা যুবদলের দপ্তর সম্পাদক হুমায়ুন, সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ হোসেনসহ বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা বলেন, এখানে আগে পৌর পাঠাগার ছিল। তৎকালীন সরকারকে খুশি করতে নৌকা জাদুঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে শহীদ জিয়া পৌর পাঠাগার স্থাপন করার দাবি জানান তাঁরা।
জানতে চাইলে যুবদল নেতা মুরাদুজ্জামান খান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু নৌকা জাদুঘর নাম দেওয়ায় জনরোষ সৃষ্টির কারণে এটা ভেঙে ফেলা হয়েছে। আমরা এটাকে শহীদ জিয়া স্মৃতি পাঠাগার তৈরি করার দাবি জানাই জেলা প্রশাসকের কাছে।’
জেলা বিএনপির সাবেক নেতা রেজবুল কবির বলেন, ‘এখানে পৌর গণপাঠাগার ছিল। সেটা ভেঙে বঙ্গবন্ধু নৌকা জাদুঘর বানানো হয়েছে। এখান থেকে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। তৎকালীন সরকারের তেলবাজি করার জন্য বঙ্গবন্ধু নৌকা জাদুঘর বানানো হয়। এখন জনগণ এটা ভেঙে ফেলেছে।’
জেলা পাবলিক পলিসি ফোরামের আহ্বায়ক মো. হাসানুর রহমান প্রথম আলাকে বলেন, ‘যারা নৌকা জাদুকর ভেঙেছে, তারা মূর্খতার পরিচয় দিয়েছে। কোনো কিছু ভেঙে ইতিহাস-ঐতিহ্যকে মুছে ফেলা যায় না। এর সঙ্গে প্রশাসনের লোক জড়িত। না হলে প্রশাসনের নাকের ডগায় এটি কীভাবে ভেঙে ফেলা হয়? একটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ ভেঙে ফেলা হচ্ছে। অথচ প্রশাসন নির্বিকার।’
জানতে চাইলে বরগুনা পৌরসভার প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) অনিমেষ বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ভাঙার পরে আমরা বিষয়টি জেনেছি। বিক্ষুব্ধ জনতা এসে ভেঙেছে। এটা তো আমাদের পৌরসভার জায়গা। এখানে একটি পাবলিক লাইব্রেরি ছিল। মাঝে জেলা প্রশাসক এসে বেসরকারিভাবে এটা করেন। এখানে কোনো সরকারি বরাদ্দ নেই। ৫ আগস্টে ওটা ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করে লুটপাট করা হয়। আজ শুধু নৌকার শেডটা বিক্ষুব্ধ জনতা ভেঙে নিয়ে গেছে।’