‘কালচার’ শেখানো নিয়ে শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, দর্শন বিভাগের কার্যক্রম স্থগিত

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ফাইল ছবি

ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের একাডেমিক কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। বিভাগটির শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর গতকাল বৃহস্পতিবার এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ঘটনার তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৫ নভেম্বর দর্শন বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের (১৮তম ব্যাচ) নবীন শিক্ষার্থীদের ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কালচার’ শেখানো নিয়ে বিবাদে জড়ায় ১৬তম ব্যাচ ও ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। এরপর ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ঘটনাটি বিভাগের অন্য ব্যাচের সিনিয়র শিক্ষার্থীদের জানালে তাঁরা সমাধানের চেষ্টা করেন। তবে মীমাংসা না হওয়ায় গত বুধবার শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিভাগে আলোচনায় বসেন বিভাগটির শিক্ষকেরা।

এরপর শিক্ষকদের সামনেই বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ায় উভয় পক্ষ। পরিস্থিতি শান্ত করতে বিষয়টি অমীমাংসিত রেখেই বিভাগটির বিভাগীয় প্রধান তারিফুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের বাইরে যেতে বলেন। পরে বিভাগীয় প্রধান সিনিয়র শিক্ষার্থীদের আবারও সেখানে আসতে বললে পথে তাঁদের ওপর হামলা চালায় ১৬ ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থী। একপর্যায়ে প্রক্টরিয়াল বডি ঘটনাস্থলে উপস্থিত গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ওই সংঘর্ষে নারী শিক্ষার্থীসহ তিনজন আহত হন।

১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাসেল মিয়া বলেন, ‘নতুন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি শেখানো নিয়ে ১৭ ব্যাচের দুই গ্রুপের মধ্যে সমস্যা তৈরি হয়। পরে বিভাগে মীমাংসার জন্য বসা হলেও মেটেনি। ঘটনাটির সূত্রপাত এখানে নয়, আমরা যখন নবীন হয়ে এসেছিলাম, তখন আগের ব্যাচের শিক্ষার্থীরা জোর করে ছাত্রলীগের মিছিলে নিয়ে যেত; নানাভাবে নিপীড়ন করত। এ নিয়ে আগে থেকেই সবার মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল।’

এ বিষয়ে বিভাগীয় প্রধান তারিকুল ইসলামের সই করা এক চিঠিতে জানানো হয়েছে, গত ২৭ নভেম্বর দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্তঃকোন্দলের জেরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে অন্য ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণের কিছু আলামত বিভাগের কাছে এসেছে। বিভাগ মনে করছে, এটি একটি নিন্দনীয় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগপত্র প্রক্টর অফিসে জমা দেওয়া হয়েছে। ঘটনার শিকার শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগের একাডেমিক কমিটির একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিভাগের স্থিতিশীলতা ও সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখাসহ যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ১৬তম ব্যাচ এবং হামলায় অভিযুক্ত বিভাগের অন্যদের একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত করা হলো।

তবে আজ শুক্রবার সকালে তারিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, জুনিয়রদের নিয়ে বসাকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত হয়। জানতে পেরে মীমাংসার চেষ্টা করলেও তারা উত্তেজিত হয়ে উঠে। পরে বাইরে গিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে সংঘর্ষ বাধে। এখানে দুটি পক্ষ দাঁড়িয়ে গেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুরো বিভাগের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।’  

ঘটনার তদন্তে গঠিত কমিটিতে আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইরফান আজিজকে সভাপতি এবং প্রক্টর মাহবুবুর রহমানকে সদস্যসচিব করে করা হয়েছে। কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সরেজমিনে তদন্ত করে লিখিত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৬ ব্যাচ এক গ্রুপ বাকি অন্য সব ব্যাচ আরেক গ্রুপ। দুই গ্রুপ থেকেই লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আশা করি, অচিরেই সমাধান হয়ে যাবে। তদন্ত শেষে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে। ঘটনার পর বিভাগ থেকে মীমাংসার চেষ্টা করা হলেও তা শিক্ষার্থীরা মানেনি। আমিও চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু শিক্ষার্থীরা বিচার চায়।’