মাগুরায় দেয়াললিখনের অভিযোগে আটক ৩ শিক্ষার্থী পুলিশের ওপর হামলা মামলায় কারাগারে

কারাগার
প্রতীকী ছবি

মাগুরায় গ্রাফিতি ও দেয়াললিখনের অভিযোগে আটক চার শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজনকে ভিন্ন একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গত মঙ্গলবার বিকেলে শহরের কলেজ রোডে গ্রাফিতি ও দেয়াললিখনের সময় ওই চার শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। পরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের ওপর হামলার একটি মামলায় গতকাল বুধবার তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠিয়ে দেন।

কারাগারে পাঠানো ওই তিন শিক্ষার্থী হচ্ছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী সিফাতুর রহমান (২১), ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী নাইমুর রহমান মুন্না (২১) ও ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শাহারিয়ার সানি (২১)। তাঁরা পরস্পরের বন্ধু। সবার বাড়ি মাগুরার শহরের বিভিন্ন এলাকায়। তাঁদের সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া সিয়াম বিন আইয়ুব নামের আরও এক শিক্ষার্থীকে আটক করা হলেও গতকাল তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মেহেদী রাসেল আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, গত ১৮ জুলাই শহরের ভায়না এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ১৯ জুলাই সদর থানায় একটি মামলা করে পুলিশ। ওই হামলায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে এই মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় একজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ওই শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার অভিযানে থাকা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকেলে শহরের কলেজ রোড থেকে তাঁদেরকে আটক করা হয়। ওই তরুণেরা মাগুরা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের একটি ভবনের দেয়ালে সরকারবিরোধী স্লোগান লেখা শেষে কলেজ রোডে ছিলেন। এ কারণে তাঁদের আটক করা হয়।

কারাগারে থাকা ওই তিন শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁদের সন্তানদের সুনির্দিষ্ট কী অভিযোগে আটক করা হয়েছে, তা বলেনি পুলিশ। কাউকে বলা হয়েছে সরকারবিরোধী দেয়ালচিত্র আঁকা, কাউকে বলা হয়েছে তাঁরা জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা। তাঁরা বলছেন, তাঁদের সন্তানেরা কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। তাঁরা সবাই মাগুরা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও একে অপরের বন্ধু। ছুটিতে বাড়িতে এলে বিকেলে বিদ্যালয় মাঠে ফুটবল খেলেন একসঙ্গে। কিন্তু সেখানে তাঁরা কোনো গ্রাফিতি বা দেয়াললিখন করেছেন কি না, তা অভিভাবকেরা জানেন না।

গ্রেপ্তার শাহরিয়ার সানির বাবা জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদেরকে বলা হয়েছে, ওরা নাকি জামায়াত-শিবির করে। আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। এখন আমাদের কী বলার আছে?’

আজ সকালে মাগুরা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে একটি ভবনের দেয়ালে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সরকারের চলমান অভিযানের বিরুদ্ধে দেয়াললিখন রয়েছে। তবে এগুলো কারা এঁকেছে, সে বিষয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কিছুই জানে না।

পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা যায়, ১৮ জুলাই মাগুরা-যশোর মহাসড়কের মৎস্য ভবনের সামনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় ওই দিন দিবাগত রাত ১২টার পর মাগুরা সদর থানায় উপপরিদর্শক (এসআই) শিমুল হালদার একটি মামলা করেন। সেখানে সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ আনা হয়। ওই মামলায় এর আগে থেকেই ৬ শিক্ষার্থীসহ ২৫ জন কারাগারে রয়েছেন।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে মাগুরায় গতকাল পর্যন্ত তিনটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিএনপি–জামাতের নেতা–কর্মীসহ ৬৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।