পাবনার চাটমোহর
সেতুর নিচে বেড়া দিয়ে মাছ চাষ
বিলের প্রায় ৭০০ বিঘা জমির ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।
শতাধিক কৃষক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
পাবনার চাটমোহর উপজেলার চলনবিল বিস্তৃত বিলচলন ইউনিয়নের দোদারিয়া চৌরাস্তায় ও বওশা চৌরাস্তার (চাটমোহর-মান্নান নগর সড়ক) দুটি সেতুর নিচে বাঁশ ও চাটাইয়ের বেড়া দিয়ে শ্রমিক লীগের এক নেতা মাছ চাষ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে বিলের প্রায় ৭০০ বিঘা জমির ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।
শ্রমিক লীগের ওই নেতার নাম মো. সুরুজ আলী। তিনি শ্রমিক লীগের চাটমোহর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও বিলচলন ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য।
বিষয়টি জানিয়ে গত ১০ জুলাই শতাধিক কৃষক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। মাঠের ফসল রক্ষায় তাঁরা বাঁশের বাঁধ অপসারণ ও মাছ চাষ বন্ধের দাবি করেছেন। তবে গত ২০ দিনেও বাঁশের বেড়া অপসারণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সুরুজ আলীর বিরুদ্ধে সেখানে মাছ চাষ করার অভিযোগ।
ভুক্তভোগী কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেদারিয়া চৌরাস্তা ও বাওশা চৌরস্তার মধ্যবর্তী অংশে চলনবিলের উত্তর সেনগ্রাম মাঠ। মাঠটিতে স্থানীয় কৃষকেরা আমন ধানের আবাদ করেন। বর্ষায় বড়াল নদ থেকে দড়িপাড়া সেনগ্রাম নালা দিয়ে এই মাঠে পানি প্রবেশ করে। এবারও মাঠটিতে বর্ষার পানি প্রবেশ করেছে। এর মধ্যেই নালার মুখের দুটি সেতুর নিচে বাঁশ, চাটাই ও জালের বেড়া দিয়ে পানি আটকে মাছ চাষ শুরু করা হয়েছে। আগামী দুই–তিন মাস পর কার্পজাতীয় মাছগুলো মাঠে বিচরণ করবে। বর্ষার শেষে এই মাঠের পানি নেমে খালে জমা হলে ওই মাছ ধরা হবে।
কৃষকদের দাবি, কার্পজাতীয় মাছ ধানের জমি নষ্ট করে, ধানগাছ খেয়ে ফেলে। ফলে মাছের কারণে ধানের ক্ষতি হবে। অন্য দিকে বর্ষা শেষে মাঠের পানি আটকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, বিল বর্ষার পানিতে থইথই করছে। পানির ওপর ভাসছে ধান। আর পানি প্রবেশের পথটি (সেতুর নিচের অংশ) বাঁশ, জাল ও চাটাইয়ের বেড়ায় আটকানো। বেড়া ভেদ করে পানি প্রবেশ করা কঠিন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে শ্রমিক লীগের নেতা সুরুজ আলী বলেন, ‘কৃষকের ভালোর জন্যই আমরা মাছ চাষ করতেছি। এতে ক্ষতির কিছু নাই। ধান আরও ভালো হবে। অনেক কৃষকই এতে সম্মতি দিয়েছেন। কয়েকজন কৃষক বিরোধিতা করছেন।’
কৃষকেরা অভিযোগ করেন, এভাবে বাঁশের বেড়া দিয়ে দুই বছর ধরে শ্রমিক লীগের নেতা মো. সুরুজ আলী আরও কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে এই মাছ চাষ করেছেন। এতে গত বছর তাঁরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। মাছ চাষ করা ব্যক্তিরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ কিছু বলতে পারছেন না। এ অবস্থায় তাঁরা ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে না।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আকতার হোসেন বলেন, ‘এই মাছ চাষের সঙ্গে আমি জড়িত নই। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমার নাম জড়ানো হচ্ছে। এলাকার কিছু বেকার ছেলে মাছ চাষ করে খায় বলে শুনেছি। তাঁরা মসজিদ-মাদ্রাসার উন্নয়নেও কিছু টাকা দেয়।’
কৃষক আবু জাফর বলেন, যে জমিতে তাঁরা ১০–১২ মণ পর্যন্ত ধান পেতেন, মাছ চাষের কারণে গত বছর সেই জমিতে ছয়–সাত মণ ধান পেয়েছেন। এতে তাঁদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাঁরা অবিলম্বে সেতুর বাঁশের বেড়া অপসারণ ও মাছ চাষ বন্ধের দাবি করছেন।
ইউএনও রেদুয়ানুল হালিম বলেন, ‘কৃষকেরা আমার কাছে এসেছিলেন। তাঁদের অভিযোগ শুনেছি। উপজেলায় নতুন এসেছি। কৃষকদের নতুন করে একটি লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। অভিযোগ দিলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’